চিন্তা করুন তো! ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় আপনি কী ঘরটি খোলা রেখে যান? নাকি দরজা-জানালা ভালোমতো আটকে… তালা দিয়ে তারপর যান? নিশ্চয়ই পরেরটা? তাহলে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনার ঘরটিকে (অ্যাকাউন্ট) কেন অরক্ষিত রাখছেন? সেগুলোও ভালোমতো তালা-চাবি দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করছেন না? যদি করতে চান… পড়তে থাকুন।

ভাবুন: ঘরবাড়ির মতো অনলাইনের বিভিন্ন একাউন্টেও আপনি কত গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসপত্র জমা রাখেন! আপনার ব্যক্তিগত যোগাযোগ, বার্তা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অন্যান্য পেশাগত কাজ… আরও কত কী! যেগুলো অন্যের হাতে পড়লে আপনার আর্থিক-মানসিক; নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। তাই অনলাইনের ঘরবাড়িগুলোর জন্যও বিবেচনা করুন শক্তিশালী তালা-চাবির ব্যবস্থা। যেটি হলো: একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড।

বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষই সহজে মনে রাখার জন্য এমন পাসওয়ার্ড বেছে নেন, যেগুলো হ্যাকাররা সহজেই ভেঙে ফেলতে পারে। যেমন “123456”, “QWERTY”, আত্মীয়, সন্তান বা পোষা প্রাণীর নাম, বা খুবই সাধারণ দুয়েকটি শব্দ…। জেনে অবাক হবেন: যুক্তরাষ্ট্রের এক বিখ্যাত হ্যাকার, জেরেমি হ্যামন্ডও তাঁর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন নিজের বিড়ালের (Chewy) নামে। সঙ্গে 123।

কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন: এমন পাসওয়ার্ড বেছে নিন: যেটি চট করে ভাঙাও যাবে না, আবার সহজে মনেও রাখা যাবে। কিভাবে সেটি করতে পারেন? ভিডিও-র শেষদিকে আমরা তেমন কিছু কৌশলের কথা বলব। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, শক্তিশালী একটি পাসওয়ার্ডে কী কী জিনিস রাখবেন:

  • পাসওয়ার্ড হতে হবে নূন্যতম ১২ অক্ষরের। তার বেশি হলে ভালো।
  • বড় হাতের অক্ষর
  • ছোট হাতের অক্ষর
  • নম্বর
  • বিভিন্ন চিহ্ন বা সংকেত চিহ্ন (#$!)
  • এবং সব কিছু থাকতে হবে মেশানো অবস্থায়

পাসওয়ার্ডে কখনো নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন: যেকোনো নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্মতারিখ, পরিচয়পত্রের নম্বর; ইত্যাদি পুরোপুরি ব্যবহার করবেন না। এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। চলুন, দেখে নেওয়া যাক: বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন। যেটি সহজে মনেও রাখতে পারবেন।

শুরুতেই এমন একটি কাঠামো তৈরি করে নিন: যেটি আপনি বিভিন্নভাবে সব অ্যাকাউন্টেই ব্যবহার করবেন। যেমন,

প্রথম তিনটি শব্দের জন্য আপনার পছন্দমতো সাধারণ কিছু একটা বেছে নিন। আপনার প্রিয় কোনো নদীর নাম! Jamuna থেকে JmN। এবং মাঝের অক্ষরটি বদলে দিন কোনো চিহ্নচিহ্ন দিয়ে। যেমন ^। তাহলে প্রথম তিন অক্ষর দাঁড়াবে— J^N।

এবার যে অ্যাকাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড তৈরি করছেন, সেখান থেকে নিন তিনটি শব্দ। ধরা যাক, আপনি Cineplexbd-র জন্য পাসওয়ার্ড তৈরি করছেন। এমন প্রতিটি ডোমেইনের প্রথম দুই অক্ষর এবং শেষের অক্ষর বেছে নিন। তাহলে এটি দাঁড়াবে Cid।

এরপর ব্যবহার করুন আপনার একটি পছন্দের চিহ্ন। ধরা যাক $।

এরপর দুই অক্ষরের একটি সংখ্যা। ধরি, 39।

শেষে আরেকটি পছন্দের চিহ্ন। ধরা যাক #।

তাহলে আপনার পাসওয়ার্ডটি দাঁড়াবে: J^NCid$39#। এবং প্রতিটি সাইটের ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ অক্ষর পরির্তন করতে হবে সেই সাইটের নাম অনুযায়ী। এভাবে আপনি চাইলে আরও একটি বিষয় জুড়ে দিয়ে পাসওয়ার্ডটি আরও দীর্ঘ ও শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। তবে মনে রাখবেন: কোনো ফর্মুলাই সরাসরি কপি করবেন না।

এখানে যেটি দেখলেন সেটি একটি উদাহরণ মাত্র। আপনি নিজের মনে রাখার মতো করে একটি পাসওয়ার্ড কাঠামো তৈরি করে নিন। আর মনে রাখবেন, পাসওয়ার্ড কখনো কাগজে বা কোথাও লিখে রাখবেন না। বেহাত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, প্রতি তিন মাসে একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু এর মুশকিল হলো, আমরা অনেকেই ভুলে যাই কোথায় কোন পাসওয়ার্ড দিয়েছি। তাই, বছরে অন্তত ২ বার, অথবা অ্যাকাউন্টে কোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখতে পেলে নিয়মিত পাসওয়ার্ড কাঠামোতে বদল আনুন

আমরা এখন এতো সাইটে যাই এবং আমাদের এত রকম পাসওয়ার্ড দিতে হয় যে, অনেকেই ঝামেলায় না গিয়ে সব সাইটের জন্য একই বা কাছাকাছি ধরনের পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটি ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার ইমেইল ও ফেসবুকের পাসওয়ার্ড যদি একই হয়, তাহলে একটি পাসওয়ার্ড বেহাত হলেই সব একাউন্ট হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই একেক একাউন্টে একেক পাসওয়ার্ড দিন। অনেকেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা এড়াতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করেন। এটি বেশ কার্যকর। এটি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবো, আরেকটি লেখায়।

আপনি কি জানেন, ২০১৩ সাল থেকে পালিত হয় বিশ্ব পাসওয়ার্ড দিবস? প্রতি বছর মে মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার, পাসওয়ার্ড দিবসে একবার রিভিউ করতে পারেন আপনার পাসওয়ার্ড ব্যবস্থা। এছাড়াও সেদিন দেখে নিতে পারেন অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, কারণ দিনটিকে সামনে রেখে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা নিত্য নতুন ঝুঁকি, পরামর্শ ও টুলস নিয়ে হাজির হন অনলাইনে।