ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা: নাগরিক সমাজের জন্য একটি টুলকিট

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা: নাগরিক সমাজের জন্য একটি টুলকিট

কৃতজ্ঞতা

এ প্রতিবেদনটি ইউএসএআইডি গ্রেটার ইন্টারনেট ফ্রিডম (জিআইএফ) প্রকল্পের অধীনে প্রকাশ হচ্ছে; প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইন্টারনিউজ ও জিআইএফ কনসোর্টিয়াম। বাংলাদেশে ডিজিটালি রাইট এই প্রকল্পের অংশীদার।

জিআইএফ, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত চার বছরের একটি প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য সমন্বিত উদ্যোগ মডেলের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অধিকার শক্তিশালী করা; আর এটি করা হবে স্থানীয় নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোকে সহায়তার মাধ্যমে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিতে সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায় এবং অপ্রথাগত অ্যাক্টরদের উদ্যোগকে জোরদার করার কাজ করে থাকে।

মূল লেখক: ওয়াকেশো কিলিলো, টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর (আফ্রিকা), (জিআইএফ) ইন্টারনিউজ

পর্যালোচক: মন্তসেরাত লেগোরেতো, প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস অ্যাসোসিয়েট, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ (জিএনআই)

লিয়েন্ড্রো উইসেফেরি, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ম্যানেজার, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস

আমেরিকান জনগণের উদার সমর্থনে প্রতিবেদনটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে; তারা এ সমর্থন দিয়ে থাকে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে। এই আধেয় তৈরির দায় ইন্টারনিউজের এবং এখানে ইউএসএআইডি অথবা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি।


সূচনা

এই টুলকিটের লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোকে পরামর্শ, পথনির্দেশনা ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে শক্তিশালী করা, যেন তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানি/সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও ভালো পরিকল্পনা করার প্রস্তুতি নিতে পারে। এই নির্দেশিকাগুলো প্রাথমিকভাবে সেই সব সংস্থা ও গবেষকদের একটা পথনির্দেশনা দেয় যারা স্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলো মূল্যায়নের কাজে র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস (আরডিআর) করপোরেট অ্যাকাউন্টিবিলিটি ইনডেক্স মেথোডলজি ব্যবহার করেছে। তবে আমরা আশা করি, আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি ও মানদণ্ড ব্যবহার করেন না– এমন গবেষকদের জন্যও এই টুলকিটটি বিশেষ সহায়ক হবে।

নিম্নোক্ত বিভাগগুলোতে আমরা কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক সেরা অনুশীলনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। একই সঙ্গে টেমপ্লেট ব্যবহার করে কোম্পানির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাব্য যোগাযোগ কৌশলগুলো দেখিয়েছি। এ থেকে আপনারা আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়গুলো আত্মস্থ করে নিতে পারবেন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিকে জবাবদিহির মধ্যে আনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা হচ্ছে কেবলই প্রথম পদক্ষেপ। বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাধীন অংশীজন, বিশেষ করে নাগরিক সমাজ যেন একটি কোম্পানিকে সামনে এগিয়ে যেতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় এবং এমন আলোচনায় কোম্পানিটিকে সম্পৃক্ত করে যা তাদের আচরণ ও অনুশীলনকে ক্রমবর্ধমানভাবে অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করে। স্বচ্ছতাকে মূল চালিকাশক্তি করলে আমরা ব্যবসায়ের নানা দিক এবং সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হয়– তা বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা পাব।

  • আস্থা: স্বচ্ছতা একটি কোম্পানি ও তার ভোক্তাশ্রেণির মধ্যে আস্থা তৈরি করে। মানুষ যখন জানে তাদের উপাত্তগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হয়, তখন তারা নির্দিষ্ট পরিষেবা কীভাবে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একটি নির্দিষ্ট ধরনের উপাত্ত অথবা সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোম্পানির ওপর তারা কতটা আস্থা রাখবে স্বচ্ছতা সেটাও নির্ধারণ করে। গ্রাহকের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করে থাকে এই স্বচ্ছতা।
  • জবাবদিহি: একটি কোম্পানি যখন তাদের নীতিগুলো ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে তখন এটি বড় পরিসরের অংশীজনদের জন্য সহায়ক হয়। কোম্পানিটি তাদের ঘোষিত অঙ্গীকার পালন করছে কিনা এবং তাদের কোনো আচরণ ও কার্যক্রমের কারণে মানুষের অধিকার ঝুঁকিতে পড়ছে কিনা অংশীজনরা তা অনুসরণ ও তদারকি তখন সহজ হয়।
  • প্রতিযোগিতা: কোম্পানিগুলোকে আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠতে চাপ দেওয়া এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে তাদের তুলনা করা হলে তাদের মধ্যে শীর্ষে যাওয়ার অনুপ্রেরণা তৈরি হয়, তখন তারা নিজেদের নীতিমালা ও চর্চাগুলো আরও উন্নত করে তোলার কাজে প্রতিযোগিতা করে। কোম্পানিগুলো যদি ডেটা ও প্রাইভেসি সুরক্ষার অঙ্গীকার করে মানুষ তা মূল্যায়ন করে; কারণ এর ফলে তাদের বাছাই করতে সুবিধা হয় কোন ধরনের অনলাইন সেবা বা অ্যাপ তারা ব্যবহার করবে বা করবে না।
  • আইনবিধির সঙ্গে সম্মতি: অনেক দেশে এমন অনেক আইন রয়েছে যেখানে কোম্পানিগুলোকে তাদের উপাত্ত অনুশীলনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকতে হয়। পাশাপাশি নতুন অনেক আইনও হচ্ছে যেখানে কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছতার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং মানবাধিকারের ওপর কী প্রভাব পড়ছে তার মূল্যায়ন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন হবে। এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আলোচিত নতুন আইনের প্রাথমিক স্তরে আপনিও অবদান রাখতে পারেন। নিজ দেশের সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ ও মানবাধিকার বিষয়ক ঝুঁকিগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে আপনি তাদের অভ্যন্তরীণ সংলাপে পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। স্বচ্ছতার ঘাটতির মাধ্যমে একটা কোম্পানি কী ধরনের ঝুঁকি বাড়ায় তা শনাক্ত করে তাদের জন্য আপনি একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারেন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সবচেয়ে সেরা অনুশীলন

ক. গবেষণা

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের আগে র‌্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস দলের সহায়তায় তৈরিকৃত আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি। এই গবেষণা করতে যেসব রিসোর্স প্রয়োজন পড়বে তা https://rankingdigitalrights.org/research-lab/-এ রয়েছে। এ জন্য র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস দলের কাছে ইমেইল করা যাবে info@rankingdigitalrights.org এই ঠিকানায়। 

আরডিআর রিসার্চ ল্যাবে গবেষণা প্রক্রিয়া বিশদভাবেই দেওয়া আছে, এরপরও সেখান থেকে আমরা নিচের পয়েন্টগুলো এখানে তুলে ধরছি। কোনো প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় এ পয়েন্টগুলো মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

– গবেষণার লক্ষ্য শনাক্ত করুন (ভালো হয় বৃহৎ কিংবা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে এমন কোম্পানিতে মনোযোগ দেওয়া)

– সেখানে কোন ধরনের গবেষণা হয় এবং সে গবেষণা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিনা সেটা নির্ধারণ করুন।

কোম্পানির সঙ্গে সাক্ষাতে আপনার যে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তা হলো “গবেষণার জন্য আপনি কেন আমাদের কোম্পানি বেছে নিলেন?” তাই নিশ্চিত করুন আপনি আগেই এ নিয়ে যথাযথ ভেবে রেখেছেন। প্রশ্নটির একটা সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে, সেবাগ্রহীতার সংখ্যার বিচারে আপনাদের কোম্পানিই দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানি।

খ. উদ্ভাবন করুন স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল 

আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ এবং কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের নীতি ও পরিচালনার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করার পর আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে তাদের সঙ্গে কাজ করার স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল উন্নয়নের দিকে।

কীভাবে স্পষ্ট উদ্দেশ্য তৈরি করা যাবে কিছু পরামর্শ:

১. শুরুতেই আপনার লক্ষ্যগুলো চিহ্নিত করুন। কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনি কী অর্জন করতে চান? আপনি কি কোনো বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে চান? আপনি কি নীতি পরিবর্তন করতে চান? আপনি কি নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব তৈরি করতে চান? যখন আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো জেনে যাবেন, তখন আপনি আপনার উদ্দেশ্যগুলো এগিয়ে নিতে পারবেন, যা সহায়ক হবে লক্ষ্য অর্জনে।

 ২. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো সুনির্দিষ্ট। সিদ্ধান্ত নিন কোন সুনির্দিষ্ট ফলাফলগুলো আপনি কোম্পানির মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে চান।

৩. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো পরিমাপযোগ্য। কীভাবে জানবেন যে আপনার উদ্দেশ্যগুলো অর্জন হচ্ছে? দৃষ্টান্ত হিসাবে আপনি বলতে পারেন, “আমি আমার সাফল্য পরিমাপ করব এটা অনুসরণ করে যে এক্স কোম্পানি কতগুলো মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট নীতি প্রকাশ করছে।”

 ৪. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো অর্জনযোগ্য। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কি বাস্তবসম্মত এবং সেগুলো কি আপনার নাগালের মধ্যে আছে? তা যদি না হয় তাহলে উদ্দেশ্যগুলো নতুন করে বিন্যস্ত করার প্রয়োজন পড়বে।

৫. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো প্রাসঙ্গিক। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কি আপনার সামগ্রিক লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যদি তা না হয় তাহলে সেগুলোর পেছনে ছোটা আপনার জন্য অর্থপূর্ণ নাও হতে পারে।

৬. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলোর সময়-সীমা আছে। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কবে আপনি অর্জন করতে চান?

উদ্দেশ্যগুলো উদ্ভাবনকালে একজনকে অবশ্যই সেই সব সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল অধিকারগুলো বিবেচনায় নিতে হবে, যেগুলো নিয়ে তারা কথা বলতে বা কাজ করতে চায়। একই সঙ্গে যে কোম্পানিগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেছে সেগুলোও সুনির্দিষ্ট করা উচিৎ। স্পষ্ট উদ্দেশ্য কীভাবে নির্ধারণ করা যায় তার উদাহরণ আরডিআর। গবেষণা পরিচালনা ও জবাবদিহির জন্য একটা মানদণ্ড তৈরি করা এবং উপাত্ত ও তথ্য প্রদান এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো ডিজিটাল যুগে মানবাধিকার সুরক্ষা ও বিকাশে সহযোগিতা করে।

এর পরের ধাপ হলো সুস্পষ্ট কৌশল উদ্ভাবন। এটি উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর কৌশল শনাক্তে সহযোগিতা করে। কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়টি আপনি তুলে ধরতে চান এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গি আপনি গ্রহণ করবেন এবং লক্ষ্য অর্জনে কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আপনি নেবেন- কৌশল উন্নয়নের সময় এগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ।

এ ছাড়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার সেরা সব অনুশীলন এবং সফল কেস স্টাডিগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন, কোম্পানির নীতি অথবা অনুশীলনে পরিবর্তন এনেছে এমন সফল প্রচারাভিযান এবং ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে কোম্পানির এমন কেস স্টাডি। সবশেষে, একজনকে কোম্পানির পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা করা উচিৎ যাতে করে উপাত্ত সংগ্রহ, ব্যবহার ও সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রক্রিয়া ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বোঝাপড়াটা পরিষ্কার করা যায়। একই সঙ্গে প্রযুক্তি কীভাবে বিকশিত হয়, সেটা কীভাবে স্থাপন করা হয় এবং ডিজিটাল অধিকারের ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে কাজ করে– সেই বোঝাপড়াটাও জরুরি।

গ. কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন

যে কোম্পানির সঙ্গে আপনি সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের আগে উন্মুক্তভাবে পাওয়া যায় এমন সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। একটি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে কীভাবে পরিচিত করবেন তা নিয়ে কয়েকটি পরামর্শ এখানে দেওয়া হলো:

  • কোম্পানির ওয়েবসাইট পড়ুন। এটা আপনাকে কোম্পানিটির ব্যবসা অনুশীলন ও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে মোটাদাগে একটা ধারণা দেবে। কোম্পানির মানবাধিকার বিষয়ক নীতি, কোম্পানির গোপনীয়তার নথি, আচরণবিধি, বার্ষিক প্রতিবেদন এবং সামাজিক বিষয়াদিতে জন বিবৃতি, ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কোম্পানির অবস্থান (যা তারা অঙ্গীকার করেছে সেটা সহ) সম্পর্কে জানতে এ সব নথি দেখতে হবে। কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় এই সব তথ্য কাজে লাগতে পারে কারণ তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে আপনি সুবিধা পেতে পারেন।
  • কোম্পানির সাংগঠনিক কাঠামোর দিকে তাকান। মালিকানা সম্পর্কে জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা কি সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব মালিকানাধীন নাকি অন্য আরেকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন, নাকি এটা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। কোম্পানির নেতৃত্ব, পরিচালনা পর্ষদ, জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব দল এবং কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগ যেমন মানবাধিকার বিভাগ, নীতি দেখাশোনার দল অথবা আইনি বিষয় দেখাশোনার দল-সম্পর্কে জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা অত্যাবশ্যক, কারণ আপনি যখন কোম্পানির সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন সেই পরিকল্পনা উন্নয়ন করবেন তখন এগুলো আপনাকে দিকনির্দেশনা দেবে।
  • কোম্পানি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলো দেখুন। এটা আপনাকে কোম্পানির উপাত্ত সুরক্ষা ও ববহারকারীর অধিকারের মতো বিষয়ে কোম্পানির অতীত অনুশীলন সম্পর্কে বোঝাপড়ায় সহযোগিতা করবে।
  • কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলুন। কোম্পানির কর্মী, গ্রাহক এবং এমনকি অংশীদারদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
  • কোম্পানিটি যদি প্রকাশ্যে লেনদেন বা বাণিজ্য করে তাহলে আপনি অংশীদারদের সভায় অংশ নিতে পারেন। আপনি কোম্পানির ওয়েবসাইটে ‘বিনিয়োগকারীদের সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য খোঁজ করার মধ্য দিয়ে এটা শুরু করতে পারেন। সেখানে অংশীজনদের সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য দেওয়া আছে, সেটা দিয়েই আপনি তাদের সম্পর্কে পরিচিত হতে পারেন। এই সব উপকরণ থেকে অনেক সময় সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কেন কোম্পানির পণ্য ও পরিষেবায় প্রভাব পড়ে তার অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। একটি কোম্পানি কীভাবে তাদের ব্যবসা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বাইরের হুমকিগুলো উপলব্ধি করে সেটি বুঝতে এই সব উপকরণ আপনার সামনে একটা জানালা খুলে দেয়।
  • কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা আপনার যোগাযোগের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাদের খুঁজে বের করার পর, তারা যে সব কাজে অংশগ্রহণ করছেন, সেদিকে নজর দিন। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার এবং আপনার উদ্বেগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার ক্ষেত্রে এটা আপনার জন্য দুর্দান্ত একটা সুযোগ।

একবার আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে পারলে, পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করার জন্য আপনি ভালো অবস্থানে থাকবেন। কোম্পানির বর্তমান নীতিগুলো সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবেন।

ঘ. সম্পৃক্ততার ধরন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন

কোম্পানির সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন– তা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো: বৈঠকে যারা অংশ নেবেন তাদের অবস্থান, অংশীজনদের সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগ এবং অর্থের সংস্থান। কোম্পানির সঙ্গে আপনি ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। কোম্পানি ও অংশীজনদের নিয়ে সরাসরি বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। অথবা ওয়েবিনার আয়োজন করতে পারেন যেখানে আপনি আপনার প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। এ জন্য আপনি আপনার প্রতিবেদনের আওতাধীন কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততার একটি উপায় হচ্ছে অংশীজনদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, শিল্পের পরিচালক ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অংশীজনদের একত্রিত করা। কর্মপদ্ধতি, ফলাফল ও সুপারিশগুলো দিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেন। এরপর আপনি একটা মুক্ত আলোচনা আয়োজন করতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন সভাকক্ষে উপস্থিত অংশীজনেরা প্রতিবেদনে উপস্থাপিত সুপারিশগুলো কতটা আত্মস্থ করতে পারছে।

ঙ. কোম্পানির কাছে পৌঁছানো

স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল উন্নয়ন ও সম্পৃক্ততার ধরন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনার জন্য কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের সময় আসবে। এটা দুইভাবে করা যেতে পারে। ১. আপনার হাতের কাছে যোগাযোগের যে পথগুলো আছে তা দিয়েই সরাসরি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল। দুই. কোম্পানিটি যদি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভস (জিএনআই) সদস্য হয় তাহলে জিএনআই টিমের কাছ থেকে সেই কোম্পানির মূল্যায়ন আপনি পাবেন। কোম্পানিটি জিএনআইয়ের সদস্য কিনা সেটা এই লিংকে গিয়ে যাচাই করতে পারেন: https://globalnetworkinitiative.org/#home-menu

কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের সময় এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার বার্তাটি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত তথ্যসহ সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এমন যদি হয় আপনি প্রথম যোগাযোগ করছেন তাহলে নিজের পরিচয়টা তুলে ধরুন। কেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন– তা ব্যাখ্যা করুন, যে গবেষণা পদ্ধতিটা আপনি গ্রহণ করেছেন তার পরিচিতি তুলে ধরুন এবং তাদেরকে জানান গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনি একটা বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানাচ্ছেন।

যদি এমন হয় আপনি আগেই ইমেইল করেছেন এবং আপনার প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আবারও যোগাযোগ করেছেন তাহলে তাদের অবশ্যই এটা নিশ্চিত করুন যে, ই-মেইলে আপনি আপনার প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছেন। সেখানে আপনাকে অবশ্যই জানাতে হবে বৈঠকটি কোথায়, কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং বৈঠকে কোন কোন অংশগ্রহণকারী ও সংস্থা উপস্থিত থাকবে।

বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির প্রতিনিধি যারা বৈঠকে অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে আগেই যদি আপনার যোগাযোগ হয়ে থাকে অথবা যে সব প্রতিনিধিদের সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করছেন, বৈঠকের আগেই তাদের সবার কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পৌঁছে দিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অন্তত সাত দিন আগে সেটা পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রতিবেদনটি বৈঠকের সময় তারা কী প্রত্যাশা করবেন সে সম্পর্কে তাদের একটা ধারণা দেবে এবং বৈঠকের আগেই তারা একটা আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এটা বৈঠককে ফলদায়ক করে তুলবে।
বিশেষ পরামর্শ- বৈঠকের আগে অপ্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুলিপি কোম্পানির সঙ্গে শেয়ার করার সুবিধা হচ্ছে আপনার সম্পর্কে তাদের একটা ভালো ধারণা তৈরি হবে। এটি তাদের কাছে এই ধারণাটি স্পষ্ট করে তুলে ধরবে যে, অপ্রকাশিত অনুলিপিটি পরিবর্তন করা হবে না। এটা আপনার ফলাফল ও সুপারিশগুলো প্রকাশ্যে আনার আগে সেটার ওপর তাদের মতামত জানানোর সুযোগ করে দেয়।

বৈঠককে সামনে রেখে কোম্পানির কাছে পাঠানো নমুনা ইমেইল

(পরিচিতিমূলক ইমেইল)

প্রিয় নায়লা,

আমার নাম আয়রানা জুরি, বর্তমানে ইন্টারনিউজে গবেষক হিসাবে কাজ করছি। আমরা আপনাদের কোম্পানির জন-প্রতিশ্রুতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এগিয়ে নেওয়ার নীতি এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা বিষয়ে গবেষণা করেছি।

আমরা আপনার কাছে আজ এই চিঠি লিখছি তার কারণ হলো আমাদের গবেষণা এখন শেষ হয়েছে। এবং প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশের আগে আমরা এর গবেষণা প্রক্রিয়া, ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।

অনুগ্রহ করে যদি আমাদের জানান এই মাসের যে কোনো দিন আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী এবং আমরা এ বিষয়ে আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে পারি।

আমরা আপনার উত্তরের প্রত্যাশায় রইলাম।

আপনার বিশ্বস্ত 

আয়রানা জুরি

তাদের সাড়া পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইমেইলের নমুনা

প্রিয় নায়লা,

সভায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। পরের সপ্তাহে আপনার সঙ্গে আমাদের সভাকে সামনে রেখে কয়েকটি হালনাগাদ তথ্য আপনার সঙ্গে শেয়ার করছি।

সভায় জিএনআই, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস, ইন্টারনিউজ, এবং ইন্টারনিউজ-এর গ্রেটার ইন্টারনিউজ ফ্রিডম প্রকল্পের অংশীজনসহ আমাদের ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

আলোচ্যসূচিতে, আমরা গবেষণাপদ্ধতি, মূল ফলাফলগুলো এবং মূল সুপারিশগুলো উপস্থাপন করব; আমাদের ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে ৩০ মিনিটের একটা উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব থাকবে। কীভাবে সামনে অগ্রসর হওয়া যাবে ও পরবর্তী ধাপ বিষয়ক সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা এ পর্বটি শেষ করব। অনুগ্রহ করে এখানে দেওয়া সম্ভাব্য আলোচ্যসূচিটা দেখবেন।

অনুষ্ঠানটি হবে লেকভিল শহরের ব্লিমিং রোজ হোটেলে।

কোনো বিষয়ে আরও স্পষ্ট কোনো তথ্য জানার থাকলে অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করবেন। বৃহস্পতিবার আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্য ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

শুভেচ্ছান্তে

আয়রানা জুরি

বিশেষ পরামর্শ: সভায় কাদের থাকা উচিৎ? সভায় কতজন অংশগ্রহণকারী থাকবেন এবং তারা কোন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন– তা জানা কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কোম্পানির সঙ্গে প্রথম সভা নিয়ে বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির সঙ্গে প্রথম সভার সময় শুরুতেই সবার পরিচিতি তুলে ধরুন, যাতে করে সভাকক্ষে উপস্থিত সবাই জানতে পারেন সেখানে কারা রয়েছেন, কোন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব তারা করছেন, সংস্থায় তারা কি ভূমিকা পালন করছেন। দ্বিতীয়ত, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে একটা ধারণা দিন, যাতে করে কোম্পানির প্রতিনিধি যারা সেখানে উপস্থিত আছেন তারা যেন গবেষণায় যে সব সূচক ব্যবহার করা হয়েছে এবং গবেষণাটি কীভাবে করা হয়েছে তার একটা ছবি দেখতে পান। গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনের পর গবেষণায় পাওয়া ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করার সুযোগ দিন, তাদের যদি কোনো ফিডব্যাক দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা দিন। সবশেষে সামনে এগোনোর উপায় নিয়ে আলোচনা করুন। আপনারা কি তাদের সঙ্গে ফলোআপ সভা করবেন? অন্য কোম্পানির সঙ্গে কি সভা করবেন? এটা কোম্পানিকে পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিতে সহযোগিতা করবে এবং আপনার দিক থেকে পরবর্তী যোগাযোগের পথ খোলা রাখবে।
মূল সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি নিয়ে বিশেষ পরামর্শ: এর পরের ধাপ হচ্ছে কোম্পানির মূল সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি। এটা কারও অ্যাডভোকেসি বা পরামর্শবিষয়ক লক্ষ্যগুলোকে সামনে অগ্রসর করতে সহায়তা করে। এটা সম্ভব হয় কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের ও আইন বিভাগকে শনাক্ত করা এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে আপনাকে ও আপনার সংস্থাকে পরিচিত করার মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কোম্পানির নীতি ও অনুশীলন নিয়ে আলোচনার জন্য একটা বৈঠকের তারিখ ঠিক করার চেষ্টা করুন, ফোন করুন অথবা তাদের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।

 চ. আপনার যুক্তির সমর্থনে প্রমাণ ব্যবহার করুন

সভায় আপনি আপনার যুক্তিগুলোর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করুন এবং সেখানে উত্থাপিত বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কোম্পানিকে রাজি করান। কোম্পানির নীতি ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে অনুশীলনের প্রভাব কী তা দেখানোর জন্য উপাত্ত, কেস স্টাডি ও গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরুন। দৃষ্টান্ত হিসাবে আপনি উপাত্ত চুরি বা ফাঁসের কারণে ব্যবহারকারীরা কতটা আক্রান্ত হয়েছে তার পরিসংখ্যান অথবা যে সব ব্যক্তির ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে সেই কেস স্টাডিগুলো তুলে ধরুন। উপাত্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোম্পানির যে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন– তা দেখাতে আপনি এটা করুন।

যে সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বৈঠকের পর সে সব বিষয়ে ফলোআপ করুন। সবশেষে, নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও ফলোআপ করতে হবে। আপনার উত্থাপিত বিষয়গুলোতে এবং ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব রক্ষায় কোম্পানি যে সচেতন রয়েছে সেটা নিশ্চিত করার জন্য এটা করা প্রয়োজন। বেসরকারি খাতের কোম্পানি যদি কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয় তাহলে তারা সেটা করছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত খোঁজ করুন। যদি তারা সম্মত না হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে এ নিয়ে একটা ব্যাখ্যা চান এবং তারা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে তা নিয়ে পরামর্শ দিন।

বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির সঙ্গে প্রথম বৈঠকের সময় আপনার প্রেজেন্টেশনে কোন বিষয়ে বেশি নজর কাড়বেন? প্রতিবেদনের ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনি যখন প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবেন তখন এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রতিটি সূচক নিয়ে আলোচনা করেছেন, অনুসন্ধানে পাওয়া মূল বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং আপনার দেশের অথবা অন্য দেশের ঘটনাগুলোকে তুলে ধরেছেন। প্রতিবেদনে যে ফলাফলগুলো আপনি পেয়েছেন তার গুরুত্ব ও প্রভাব দেখানোর জন্য এটা করা দরকার। দৃষ্টান্ত হিসাবে এমন একটা দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসুন যেখানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। আপনি যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের প্রাপ্তি এই সূচকটি দেখাবেন তখন এ বিষয়টিতে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করুন যে কোন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন সামাজিক মাধ্যম ও তাৎক্ষণিক বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ ও সেবায় প্রবেশে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে। আপনি আপনার প্রেজেন্টেশনে বিশেষভাবে দৃষ্ট আকর্ষণ করুন যে অতীতেও দেশটিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণে দেশটির জনগণের ওপর কি প্রভাব পড়েছিল। এর মাধ্যমে আপনি কোম্পানিকে প্রাসঙ্গিক নীতি প্রকাশের জন্য সুপারিশ করুন।

ছ. বৈঠকের পর ফলোআপ কীভাবে করবেন

উপস্থিত ছিলেন এমন প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর কাছে বৈঠক শেষ হওয়ার পর একটি ইমেইল পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বৈঠকে বেরিয়ে আসা মূল প্রতিশ্রুতিগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া। যেমন, কোম্পানি যদি লিখিত আকারে তাদের মন্তব্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে তাহলে সেটা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। সময়সীমার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করুন যেন তারা এ ব্যাপারে সচেতন হয় যে.তাদের মন্তব্যগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে।

ফলোআপ মেইলের নমুনা

হাই নায়লা,

গতকালের বৈঠকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে বড় একটা ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ এবং প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করে ও ফিডব্যাক জানিয়ে আপনি যেভাবে আমাদের সম্মানিত করেছেন তার প্রশংসা জানাই।

বৈঠকে আপনি সম্মত হয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটা সামগ্রিক ফিডব্যাক পাঠাবেন। অনুগ্রহ করে সেটা পাঠাবেন। কোনো বিষয়ে স্পষ্ট করে আরও কিছু জানার দরকার হলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।

একটা ভালো সপ্তাহ কাটুক।

শুভেচ্ছান্তে

আয়রানা জুরি

বিশেষ পরামর্শ: বৈঠকের পর ফিডব্যাক পাঠানোর জন্য তাদেরকে সময় দিন। প্রতিবেদনের ওপর কোম্পানির ফিডব্যাক পাঠানোর আগে দলের সদস্য অথবা প্রতিষ্ঠানের অন্য বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় দরকার হয়। সেটা করার জন্য প্রথম বৈঠকের পর আপনি তাদের জন্য কিছুটা সময় দিন যাতে করে তারা আপনার প্রতিবেদনের ওপর তাদের লিখিত ফিডব্যাক পাঠাতে পারে।

জ. সচেতনতা তৈরির জন্য সামাজিক মাধ্যমের সুবিধা নিন

সামাজিক মাধ্যম আপনার প্রচারণার সচেতনতা সৃষ্টিতে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী টুল হতে পারে। আপনার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং সমর্থকদের তাতে সম্পৃক্ত করতে হ্যাশট্যাগ, পিটিশন ও অন্যান্য অনলাইন টুল ব্যবহার করুন। আপনার গবেষণার ফলাফল আরও দৃশ্যমান করার জন্য আপনার গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

ঝ. অগ্রগতি অনুসরণ ও প্রভাব মূল্যায়ন

কতটা অগ্রগতি হচ্ছে সেটা অনুসরণ করা এবং কতটা প্রভাব তৈরি করছে তার মূল্যায়ন করা বেসরকারি খাতে আপনি কতটা কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হতে পারছেন– তা পরিমাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্ট মাপকাঠি নির্ধারণ করুন এবং ডিজিটাল অধিকারের বিষয়ে কোম্পানির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করুন। সমর্থক ও অংশীজনদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন এবং আপনার কৌশল উন্নয়নের ক্ষেত্রে সে ফিডব্যাক ব্যবহার করুন।

ঞ . সাফল্য উদযাপন

পরিশেষে, যত ছোট অগ্রগতি হোক না কেন সেটাকে স্বীকৃতি দিন। ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং প্রচেষ্টার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিন।

বিশেষ পরামর্শ: অন্যদের দক্ষতাকে কাজে লাগান। আপনার সঙ্গীদের সক্ষমতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে জিএনআই-এর কথা বলা যায়। জিএনআই হচ্ছে সদস্যভিত্তিক সংস্থা, টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এই সংস্থার কিছু সদস্য। ফলে একটি দল সবচেয়ে ভালো উপায়ে কীভাবে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে জিএনআই তার একটা ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। একই সঙ্গে কীভাবে বার্তা আদান-প্রদান করতে হবে, কীভাবে কোম্পানির কাছে পৌঁছাতে হবে এবং কীভাবে সফলভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে তার জন্যও প্রয়োজনীয় পথ দেখাতে পারে জিএনআই।

গ্লোবাল ইন্টারনেট ফোরামের মূল ইংরেজি টুলকিটটি পাবেন এখানে

অনলাইন প্রাইভেসি: কেন জরুরি, কীভাবে নিশ্চিত করবেন

অনলাইন প্রাইভেসি: কেন জরুরি, কীভাবে নিশ্চিত করবেন

আসুন, একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করি। ধরুন, আপনি ডায়েরি লিখছেন। সেটি এমন জায়গায় রাখা যে কখনো, কারো হাতে পড়ার সম্ভাবনা নেই। সেখানে কী লিখছেন— তা শুধু আপনিই জানবেন। আর কেউ না। এই গোপনীয়তা আপনাকে অসংকোচে, মনে যা আসে, তা-ই লেখার সুযোগ করে দেয়। তাই না? কারণ, ডায়েরির এই জগতটি একান্তই আপনার ব্যক্তিগত।

কিন্তু ডায়েরিটি যদি এমন জায়গায় থাকে যে যে কেউই যখন-তখন পড়ে ফেলতে পারে? ভাবুন তো, তখনও কি আপনি অসংকোচে, যা মনে হয় তা-ই লিখতে পারবেন? উত্তরটা না-ই হওয়ার কথা।

আরেকভাবে চিন্তা করা যাক। ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন, আর সব সময় আপনার মনে হচ্ছে যে আপনাকে কেউ অনুসরণ করছে; বা আপনি জানেন আপনাকে কেউ অনুসরণ করছে, সার্বক্ষণিক চলাফেরা কেউ দূর থেকে দেখছে। অস্বস্তি হবে না স্বাধীনভাবে চলাচল করতে? এক্ষেত্রেও উত্তরটা হ্যাঁ-ই হওয়ার কথা।

আপনার একান্ত গোপনীয় ডায়েরি হোক, বা আপনার প্রতিদিনের গতিবিধি – এ ধরনের তথ্য যে কোন সময় আপনার ক্ষতি সাধনের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব। কেউ না হয় ক্ষতি না না-ই করল, কিন্তু সব সময় নজরদারিতে থাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ভয় আপনার ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে – ইচ্ছেমত লেখা বা চলাফেরার স্বাধীনতাকে – কীভাবে সংকুচিত করে সেটি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।   

কেউ যেন আপনার ডায়েরি-চিঠি পড়ে না ফেলে, রাস্তায়, মাঠেঘাটে আপনাকে যেন কেউ অনুসরণ না করে, নজরদারিতে না রাখে, আপনার ঘরে হুটহাট কেউ ঢুকে না যায়, আপনার ড্রয়ারে, বা ওয়ারড্রোবে যেন কেউ উঁকি দিতে না পারে– এসব নিশ্চিত করাকেই মোটাদাগে বলা যায় প্রাইভেসি নিশ্চিত করা। 

অনলাইনের জগতের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা এমনই, যেখানে আপনার প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ডের ওপর প্রতিনিয়ত নজর  রাখা হচ্ছে। আপনার নানা ধরনের মূল্যবান সনাক্তকরণ তথ্য আপনার অজান্তে হয়তো চলে যাচ্ছে অন্য কারো হাতে। 

ভাবছেন কাউকে গোপনে কিছু লিখেছেন, সেটিই হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে গিয়ে জমা হচ্ছে। আপনার দেশ, শহর, বাড়ির ঠিকানাসহ আপনার  প্রতিদিনের অনলাইন কর্মকাণ্ডের ডেটা নিয়ে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আপনার একটি ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করছে। ভার্চুয়াল আপনি, আপনার পছন্দ-অপছন্দ, অনলাইন জীবনের গোপন তথ্যগুলো যদি খোলাবাজারে বেচা-বিক্রি হয়, কেমন লাগবে? সমস্যা হলো, এর ফলে আপনি বাস্তবিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বা আপনার তথ্য পাওয়ার ধরন বদলে যেতে পারে।  

ইউরোপিয় ইউনিয়নের ডেটা সুরক্ষা আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, “ব্যক্তিগত ডেটা হচ্ছে এমন ধরনের তথ্য যা দিয়ে কোনো জীবিত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা যায়। যে খণ্ড খণ্ড তথ্যগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সনাক্ত করা সম্ভব, সেগুলোও ব্যক্তিগত ডেটার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।” ফলে এর মধ্যে আপনার নাম, ঠিকানা, জন্মদিন, ইমেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি যেমন আছে, তেমনি আপনার বার্তা, ইমেইল, ব্রাউজিং, সার্চ প্রবণতা, লোকেশন ডেটা, আইপি অ্যাডড্রেস ইত্যাদিও আছে।

অফলাইনে আপনার প্রাইভেসি রক্ষার কাজটি সহজ। আপনি আপনার ঘরে বা ড্রয়ারে তালা দিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু অনলাইন দুনিয়ায় কাজটি কিছুটা জটিল। অনেক ক্ষেত্রে আপনি বুঝতেও পারবেন না যে আপনার প্রাইভেসি লঙ্ঘিত হচ্ছে। হয়তো আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য, ডেটা চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও। আবার হয়তো আপনি না-বুঝেই তাদেরকে আপনার তথ্য সংগ্রহ ও বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে শুধু যে আপনিই ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন— তা-ই নয়। নির্বাচনের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গেও জুড়ে গেছে প্রাইভেসি লঙ্ঘন সংশ্লিষ্ট বিষয়। কারণ ডিজিটাল এই যুগে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হরদম থাকে কেনাবেচা হওয়ার, বা নানাভাবে ব্যবহার হওয়ার শঙ্কায়।

ছবি: পিক্সাবে

অনলাইন প্রাইভেসি কীভাবে লঙ্ঘিত হয়: কিছু উদাহরণ

ধরা যাক, আপনি কোনো অনলাইন সেবা বা অ্যাপকে শুধু আপনার নাম-ঠিকানা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সেই সেবা বা অ্যাপটি আপনাকে না জানিয়েই আপনার লোকেশন, কন্ট্যাক্ট বা এসএমএসের তথ্য ব্যবহার করছে বা সংরক্ষণ করছে। তাহলে এটিই হবে আপনার প্রাইভেসি লঙ্ঘন।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ, পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে এমন প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। বলা হয়েছিল, প্রতিবার পাঠাওয়ে লগইনের সময় তারা ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই এসএমএস ও কন্ট্যাক্ট লিস্টের ডেটা সংগ্রহ করে। এবং সেই তথ্য জমা রাখে একটি থার্ড পার্টি সার্ভারে।

২০২০ সালে জনপ্রিয় অনলাইন মিটিংপ্লেস জুমের বিরুদ্ধেও উঠেছিল এমন প্রাইভেসি লঙ্ঘনের অভিযোগ। যেখানে বলা হয়েছিল: ব্যবহারকারীরা যখন কোনো জুম মিটিংয়ে যোগ দেন, তখন তাদের ডেটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় অন্য একটি সিস্টেমে, যেখানে সেই ডেটাগুলো মেলানো হয় ব্যবহারকারীদের লিংকডইন প্রোফাইলের সঙ্গে।

এর আগে ২০১৩ সালে ইয়াহু মেইল ও ২০১৬ সালে উবার রাইডার ও ড্রাইভারদের বিপুল পরিমাণ ডেটা ফাঁসের ঘটনাও দেখা গেছে, যে কারণে দুই কোম্পানিকেই পড়তে হয়েছে বিপর্যয়ের মুখে।

ডিজিটাল প্রাইভেসি লঙ্ঘনের সবচেয়ে সাড়া জাগানো উদাহরণ হয়তো কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনা। যেখানে ৫০ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য তাদের অজ্ঞাতেই কাজে লাগানো হয়েছিল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে। এভাবে প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রথা-প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এই ডিজিটাল যুগে।

এভাবে আরও কত উপায়ে আপনার কত তথ্য অন্যদের হাতে চলে যাচ্ছে— আপনি হয়তো ধারণাও করতে পারছেন না। আপনি হয়তো অনলাইনে কোনো গেম খেলছেন, কোনো অ্যাপ ব্যবহার করছেন শুধু সেই কাজটিই করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এজন্য আপনি তাদেরকে যে আপনার মেমোরি, কন্ট্যাক্ট-এ প্রবেশাধিকার দিয়েছেন— তা হয়তো আপনি খেয়ালও করেননি। এবং তার ফায়দা উঠিয়ে আপনার অনেক ব্যক্তিগত তথ্য হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে অন্য কারো কাছে। যে কিনা সেই তথ্যগুলোকে ব্যবহার করবে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, যেটির সঙ্গে আপনি সম্মত না-ও হতে পারেন বা এতে আপনার ক্ষতিও হতে পারে।

অনলাইন প্রাইভেসি লঙ্ঘনের ধরন ও প্রভাব

ডিজিটাল জগতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ডেটা আপনার অজ্ঞাতেই অন্যের হাতে চলে যেতে পারে বেশ কয়েকটি উপায়ে। যার মধ্যে আছে:

  • বড় আকারের ডেটা ফাঁস: কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেস হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অন্য কারো কাছে চলে যেতে পারে সেই ডেটাবেসে রক্ষিত অনেক সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পরিচয়পত্র নম্বর বা এ ধরনের অন্যান্য তথ্য। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ইয়াহু, বা উবারের ক্ষেত্রে।
  • অনলাইন নজরদারি: কিছু অ্যাপ ও ওয়েবসাইট আপনার ব্রাউজিং হিস্টরি, সার্চ হিস্টরি এবং অন্যান্য অনলাইন কর্মকাণ্ডের ডেটা সংগ্রহ করতে পারে আপনার পছন্দ-চাহিদা অনুযায়ী আরও সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য। এভাবে ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া সংগ্রহ করা হতে পারে লোকেশন সংক্রান্ত তথ্যও। এভাবে সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে আপনার ওপর নজরদারিও চালাতে পারে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
  •  বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট:  সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই যেসব ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি-ভিডিও শেয়ার করি— সেগুলোও ব্যবহার হতে পারে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে। হয়তো আপনার কোনো ছবি বা তথ্য দিয়ে তৈরি হতে পারে নকল অ্যাকাউন্ট। বা আপনার কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেও সেখানে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে অন্য কারো হাতে।
  •  ফিশিং ও ম্যালওয়্যার: এই পদ্ধতিতে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে হ্যাকাররা। আপনাকে হয়তো কোনো জরিপে বা লটারিতে অংশ নেওয়ার বা কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করার আহ্বান জানানো হতে পারে। তাদের কথামতো তেমনটি করলেই আপনার তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে। আবার আপনার ফোন বা ল্যাপটপে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানোর মাধ্যমেও সেখানে থাকা সংবেদনশীল তথ্য-ডেটা হাতিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা।

অনলাইন প্রাইভেসি রক্ষায় করণীয়

ডিজিটাল জগতের প্রাইভেসি শতভাগ রক্ষা করা সম্ভব কিনা— তা নিয়ে ঢের বিতর্ক আছে। কারণ অনলাইনে প্রতি মুহূর্তে আপনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন নানা ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। যেগুলোর মাধ্যমে আপনাকে সনাক্ত করা যায়, আপনার গতিবিধির দিকে নজর রাখা যায়। তবে আপনি অবশ্যই সহজে এমন কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন— যা প্রাইভেসি লঙ্ঘন সংক্রান্ত ক্ষতিকর দিকগুলো এড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

  • কেউ যেন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আপনার কোনো তথ্য, ডেটা হাতিয়ে নিতে না পারে— তা নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে নজর দিন আপনার ডিভাইসগুলোর সুরক্ষার দিকে। কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের জন্য ব্যবহার করুন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, পাসফ্রেজ বা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। ডিভাইসগুলোর অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ অবস্থায় রাখুন। অপ্রয়োজনীয় বা সন্দেহজনক অ্যাপ ও সফটওয়্যার মুছে দিন। ব্যবহার করুন কার্যকরী একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। কম্পিউটারের সুরক্ষা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার আরও কিছু পরামর্শ পড়ুন এখানে
  • গুগল, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মতো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর প্রাইভেসি সেটিংস-এ নজর দিন। গুগল ও ইউটিউব আপনার যাবতীয় সার্চ হিস্টরি জমা করে রাখে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন বা ভিডিও দেখানোর জন্য। কিন্তু আপনি চাইলেই এগুলো মুছে দিতে পারেন বা এসব মনে না রাখার অপশন চালু করে দিতে পারেন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস সংক্রান্ত বিস্তারিত পরামর্শ পাবেন এখানে
  • অনলাইন প্রাইভেসি রক্ষার ক্ষেত্রে ভালোভাবে নজর দিন আপনার স্মার্টফোনটির দিকে। প্রায়ই বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের সময় আপনি সেগুলোকে আপনার স্মার্টফোনের বিভিন্ন জিনিসে প্রবেশাধিকার দেন। যেমন, ক্যালেন্ডার, ক্যামেরা, কন্ট্যাক্টস, লোকেশন, মাইক্রোফোন, ফোন, এসএমএস ও স্টোরেজ। অ্যাপগুলোকে এ ধরনের অনুমতি দেওয়ার আগে বিবেচনা করুন যে, সত্যিই সেই অ্যাপটির সেই প্রবেশাধিকার প্রয়োজন কিনা। যেমন, নোট রাখার কোনো অ্যাপ যদি আপনার লোকেশন ডেটায় প্রবেশাধিকার চায়—তাহলে সন্দেহ করুন। কেন অ্যাপটির লোকেশন ডেটা প্রয়োজন?

এভাবে কোন অ্যাপকে স্মার্টফোনের কোন কোন জিনিস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে— তা পর্যালোচনা করুন। হয়তো আপনি এমন কোনো অ্যাপকে আপনার লোকেশন বা ফোনবুক ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে রেখেছেন—যেটি সেই অ্যাপটির আদৌ প্রয়োজন নেই। এই ধরনের অনুমতিগুলো বাতিল করে দিন। স্মার্টফোনে আমরা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপও ইন্সটল করে রাখি। কোনো কোনো অ্যাপ হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারও করা হয় না। এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে দিন। স্মার্টফোনের প্রাইভেসি নিয়ে আরও পরামর্শ পাবেন এখানে

  • বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্রাউজ করার সময়ও আমাদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করে। এই ধরনের ট্র্যাকার বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন প্রাইভেসি ব্যাজারের মতো ব্রাউজার এক্সটেনশন। ওপেন সোর্স ইন্টারনেট ব্রাউজার, ব্রেভ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই ধরনের ট্র্যাকার ও অ্যাড ব্লক করে। প্রাইভেসি সচেতন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ব্রেভ ব্রাউজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনার সচরাচর ব্রাউজ করা ওয়েবসাইটগুলো কী ধরনের ট্র্যাকার ব্যবহার করে—তা জেনে নিতে পারেন এই টুলটি ব্যবহার করে। 
  • আপনি যদি প্রাইভেসি রক্ষায় আরও বাড়তি পদক্ষেপ নিতে চান— তাহলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করতে পারেন। সার্চের ক্ষেত্রে গুগল বা ইয়াহুর পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন ডাকডাকগো বা কুয়ান্ট। এই সার্চ ইঞ্জিনগুলো গুগলের মতো আপনার সার্চ হিস্টরি ট্র্যাক করে না।
  • আপনার ইমেইল ও ক্ষুদে বার্তা যেন অন্য কেউ পড়ে না ফেলে, সেগুলোর প্রাইভেসি যেন লঙ্ঘন না হয়— সেজন্য এমন ইমেইল সেবা বা ম্যাসেঞ্জিং অ্যাপ ব্যবহার করুন, যেখানে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন চালু আছে। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম বা সিগন্যালের মতো ম্যাসেঞ্জিং অ্যাপগুলোতে এই এনক্রিপশন সেবাটি পাওয়া যায়।
  • ইমেইল এনক্রিপশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন মেইলভেলপ ব্রাউজার এক্সটেনশন। এটির মাধ্যমে যেকোনো ইমেইল পাঠানোর আগে সেটি এনক্রিপ্ট করে নেওয়া যায়। ফলে যদি ইমেইলটি অন্য কারো হাতে পড়েও যায়— তাহলেও সেটি কারো পড়ার উপায় থাকবে না। ব্যবহার করতে পারেন প্রোটনমেইল বা টুটানোটার মতো এনক্রিপ্টেড ইমেইল সার্ভিস।
  • আপনার বর্তমান ইমেইল অ্যাডড্রেসটি এরই মধ্যে কোনো ডেটা ফাঁস বা প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মুখে পড়েছে কিনা—তা যাচাই করে নিতে পারেন এই সাইটটিতে গিয়ে। এখানে আপনার ইমেইল অ্যাডড্রেসটি বসিয়ে সার্চ করলে জানতে পারবেন আপনার ইমেইল সংক্রান্ত ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কার হাতে গিয়েছে কিনা। যদি সেখানে এমন ডেটা ব্রিচের কথা জানানো হয়—তাহলে দ্রুত আপনার ইমেইল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো। পাশাপাশি যে সাইটগুলো আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে—সেই অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ডও আপনার নতুনভাবে তৈরি করা উচিৎ।
  • কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে থাকা তথ্য, ডেটার সুরক্ষা নিয়েও চিন্তা করলে সেগুলোও এনক্রিপ্ট করে রাখার কথা বিবেচনা করতে পারেন। এতে কখনো কোনোভাবে যদি আপনার ফোন বা ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায় বা হারিয়ে যায়—তাহলেও আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ডেটাগুলো অন্য কেউ দেখে ফেলার সুযোগ কম থাকে।
এনক্রিপশন কেন গুরুত্বপূর্ণ? কীভাবে করবেন?

এনক্রিপশন কেন গুরুত্বপূর্ণ? কীভাবে করবেন?

মোবাইলে বা অনলাইনে আপনি প্রতিনিয়ত যেসব মেইল, মেসেজ আদানপ্রদান করছেন, কথা বলছেন, সেগুলো অন্য কেউ দেখে বা শুনে ফেলুক– তা নিশ্চয়ই চাইবেন না। ব্যক্তিগত এসব ডেটা সুরক্ষিত রাখার অন্যতম উপায় এনক্রিপশন পদ্ধতির ব্যবহার। এর মাধ্যমে আপনার একটি বার্তা বা মেইল শুধু তিনিই দেখতে পারবেন, যাকে উদ্দেশ্য করে এটি পাঠানো হয়েছে। মাঝখানে কোনো সংস্থা বা হ্যাকার সেখানে আড়ি পাততে পারবে না। 

চিন্তা করুন সেই চিঠি পাঠানো যুগের কথা। একটি চিঠি কোথাও পাঠানোর আগে সেটি পোস্টঅফিসে বা ডাকবাক্সে জমা দিতে হতো একটি হলুদ খামের ভেতরে। তারপর ডাকপিয়ন সেই খামের উপরে থাকা ঠিকানা অনুযায়ী সেটি নির্দিষ্ট প্রাপকের হাতেই পৌঁছে দিত। ফলে প্রাপক ব্যক্তি ছাড়া ওই খামে কি তথ্য আছে সেটা অন্য কেউ জানতে পারত না। ডাকবিভাগের চিঠির ওই হলুদ খামের মতই কাজ করে এনক্রিপশন পদ্ধতি। ডাক পদ্ধতিতে যেমন প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ তথ্য সম্পর্কে জানত না, তেমনি এই এনক্রিপশন পদ্ধতিতেও প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে পারেনা।

অন্যদিকে আপনি যদি চিঠিটি একটি পোস্টকার্ডের মাধ্যমে পাঠান, তাহলে সবাই দেখতে পারবে সেখানে কী লেখা আছে। এনক্রিপশন ছাড়া পাঠানো বার্তা বা ইমেইল অনেকটা এই পোস্টকার্ডের মতো, যেখানে সেটি প্রাপক ছাড়াও আরও অনেকের দৃষ্টিগোচর হতে পারে।

এনক্রিপশন কী?

সহজ ভাষায় এনক্রিপশন হচ্ছে এক ধরনের ডেটা সুরক্ষা পদ্ধতি যেখানে তথ্যগুলো বদলে দেওয়া হয় গাণিতিক কিছু অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। যেটিকে বলা হয় সাইফার। এভাবে এনক্রিপশনের মাধ্যমে আপনি যখন একটি টেক্সট বা ছবি পাঠান, তখন সেগুলো এমন কিছু প্রতীক ও সংকেতে পরিণত নয়, যা থেকে বার্তাটির মূল অর্থ বোঝার উপায় থাকে না। এনক্রিপ্ট করা এই টেক্সট যখন নির্দিষ্ট প্রাপকের কাছে পৌঁছায়, তখনই কেবল সেটি আবার ফিরে আসে মূল অবস্থায়। যেখানে টেক্সটটি পড়া যাবে বা ছবিটি দেখা যাবে। ফলে এনক্রিপ্ট করা বার্তাটি যদি প্রাপক থেকে প্রেরকের মাঝখানে অন্য কারো হাতে পড়েও যায়, তাহলেও কেউ সেটির অর্থ উদ্ধার করতে পারবে না। 

এনক্রিপশনে একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক কি (একগুচ্ছ টেক্সট যেটি পাঠযোগ্য ডাটাকে অপাঠযোগ্য ডেটা/সাইফারটেক্সটে পরিণত করে) ব্যবহার করা হয়। প্রেরক তথ্য পাঠানোর সময় একটি এনক্রিপশন কি প্রয়োগ করে ডেটা এনক্রিপশনের জন্যে, যেটা তথ্য পাবার পর প্রাপক ব্যবহার করে তথ্য পাঠযোগ্য বা ডিক্রিপ্ট করতে। ফলে, সঠিক কি ছাড়া অন্য কেউই এই তথ্য পড়তে পারেনা। 

এনক্রিপশন কি ব্যবহারের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে, এনক্রিপশন পদ্ধতিকে ২ ভাগে করা যায়। সিমেট্রিক ও এসিমেট্রিক এনক্রিপশন। সিমেট্রিক এনক্রিপশন পদ্ধতিতে প্রেরক ও প্রাপক; দুই পক্ষের কাছেই একটি পাবলিক কি থাকে। তথ্য পাঠানো বা গ্রহণের সময় ব্যবহার করা হয় একই কি। অন্যদিকে এসিমেট্রিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে থাকে দুইটি কি। শুরুতে পাবলিক কি-এর মাধ্যমে ডেটা এনক্রিপ্ট করা হয়। এবং প্রেরকের কাছে পাঠানো হয়। তথ্যটি পড়ার জন্য প্রেরকের কাছে থাকে আরেকটি প্রাইভেট কি। শুধুমাত্র এই কি-টি দিয়েই এনক্রিপ্ট করা ডেটাটির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব। 

ছবি: পিক্সাবে

এনক্রিপশন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান; সবার জন্যই ডেটা এনক্রিপশন গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল-মেসেজ বা মোবাইল-ল্যাপটপে থাকা ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য যেমন এনক্রিপশনের বিকল্প নেই, তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনও তাদের সংবেদনশীল ডেটাগুলো নিরাপদ রাখার জন্য আশ্রয় নিতে পারে এনক্রিপশন পদ্ধতির। 

যেমন, কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে যদি গ্রাহক বা ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক বিবরণীর মতো বিষয়ের ডেটা থাকে– তাহলে সেগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য তারা সেগুলো এনক্রিপ্ট করে রাখার কথা ভাবতে পারে। তাহলে ডেটাগুলো যদি অন্য কারো হাতে চলেও যায়– তাহলেও সেগুলো কেউ পড়তে পারবে না।

ইমেইল এনক্রিপশন

প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য আদান-প্রদানে ইমেইল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কোন আর্থিক তথ্য সম্বলিত ইমেইল আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আবার কোনো ইমেইলে আপনার সম্পত্তির মালিকানা বিষয়ক তথ্য থাকতে পারে। আপনি আপনার অফিসের কিছু ক্লায়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ নথি শেয়ার করতে পারেন। এসব তথ্য আপনার নিজের বা প্রতিষ্ঠানের জন্যে অনেক সংবেদনশীল, তাই এসব তথ্য যাতে হ্যাকাররা চুরি করতে না পারে সেজন্য ইমেইল এনক্রিপশন ব্যবহার করা উচিত। 

এনক্রিপশন আপনার ইমেইলের সকল তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ইমেইলের সংবেদনশীল তথ্যগুলো ব্যক্তিগত রাখে, ফলে অন্য কেউ সেই তথ্যগুলো চুরি করতে বা পরিবর্তন করতে পারেনা। 

এনক্রিপশন নির্ভর ইমেইলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ফোটনমেইল বা টুটানুটার মতো মেইল সার্ভিস। এগুলোতে শুরু থেকেই এনক্রিপশন ব্যবস্থা চালু থাকে। ইয়াহু বা জিমেইল থেকে পাঠানো মেইলগুলোও আপনি এনক্রিপ্ট করে নিতে পারেন। তবে এজন্য ব্যবহার করতে হবে মেইলভেলপের মতো সেবা। 

মেসেজ এনক্রিপশন

আপনি যদি চান যে, আপনার পাঠানো ব্যক্তিগত বার্তা বা ফোনকল অন্য কেউ দেখে বা শুনে না ফেলে, তাহলে অবশ্যই এমন কোনো সেবা ব্যবহার করা উচিৎ, যেখানে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন পদ্ধতি চালু আছে। এই ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করে যে, প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ বার্তাগুলো পড়তে পারবে না। অনলাইনে নজরদারির ঝুঁকিতে আছেন– এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য এই এনক্রিপশন ব্যবস্থা খুবই জরুরি। 

এনক্রিপ্টেড মেসেজ ও ফোনকলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন সিগন্যাল বা টেলিগ্রামের মতো অ্যাপ। জনপ্রিয় ম্যাসেঞ্জিং অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপেও আছে এই এনক্রিপশন সুবিধা। 

ফাইল এনক্রিপশন

শুধু ইমেইল, কল বা মেসেজের ক্ষেত্রেই নয়, এনক্রিপশন জরুরি ডেটা সুরক্ষার জন্যও। প্রায়ই আমাদের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে জমা থাকে ব্যক্তিগত বা পেশাগত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, যেগুলো অন্য কারো হাতে পড়লে আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তেমনটি যেন কোনোভাবেই না হয়– তা নিশ্চিত করতে পারেন ফাইল এনক্রিপশনের মাধ্যমে। ডিভাইসে ফাইল এনক্রিপশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিটলকার, ভেরাক্রিপ্ট, বা ফাইলভল্টের মতো সার্ভিস। 

বর্তমানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনেক তথ্য সংরক্ষিত থাকে ক্লাউডে। ফলে এখানেও আপনার ডেটা যেন সুরক্ষিত থাকে– সেজন্য এনক্রিপ্টেড ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহারের কথা বিবেচনা করুন। এজন্য দেখুন সিঙ্ক ডট কম, পিক্লাউড, বা আইড্রাইভের মতো ক্লাউড সার্ভিস।

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ক্লাউড সার্ভিস, গুগল ড্রাইভও ব্যবহার করে এনক্রিপশন সার্ভিস। তবে আপনি যদি ডেটাগুলো আরও সুরক্ষিতভাবে সেখানে আপলোড করতে চান, তাহলে ব্যবহার করুন বক্সক্রিপ্টর বা ক্রিপ্টোমোটরের মতো এনক্রিপশন সার্ভিস। এগুলোতে ফাইল এনক্রিপ্ট করে যদি গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করেন, তাহলে অন্য কারো পক্ষেই সেই ডেটায় হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হবে না। 

ইন্টারনেটের এই যুগে ব্যক্তিগত যোগাযোগের নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ব্যক্তিগতই নয়, বিশ্বায়নের এই সময়ে প্রযুক্তিগত কারণে বিভিন্ন ব্যবসাও এখন ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। ফলে, ইন্টারনেট ছাড়া পৃথিবী অকল্পনীয়। কিন্তু এই ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্কতার বিকল্প নেই। খুব সহজেই হ্যাকাররা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে আপনার আর্থিক বা ব্যক্তিগত ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই, আপনার ব্যক্তিগত এসব তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এখনই কোন এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার সকল রকম তথ্য নিরাপদ রাখুন। তাহলেই অপরিহার্য কিন্তু বিপজ্জনক এই অনলাইন বিশ্বে আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি না হওয়া থেকে কম চিন্তিত থাকবেন।

কম্পিউটারের সুরক্ষায় কী করবেন, কী করবেন না

কম্পিউটারের সুরক্ষায় কী করবেন, কী করবেন না

সাইবার হামলা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশি প্রাধান্য পায় বড় বড় শিল্প, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সরকারের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানগুলো। যেখানে র‌্যানসামওয়্যারের মাধ্যমে অচল-অকেজো করে দেওয়া হয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে, এবং সেটি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করা হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ। এর বাইরেও আরও নানা পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমানুষকে হয়রানি-হেনস্তা করে সাইবার অপরাধীরা। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় থেকে, ব্যক্তিমানুষ এবং ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক আকারে সাইবার হামলার শিকার হতে শুরু করেছে।।

এখনকার ডিজিটাল যুগে প্রায় সব ধরনের পেশাগত কাজের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মতো কোনো ডিজিটাল ডিভাইস। এখন হয়তো আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপেই থাকে পেশাগত অনেক জরুরী ডকুমেন্ট, যেগুলো হয়তো আপনি চাইবেন না যে অন্য কারো হাতে পড়ুক। এমনকি কম্পিউটারে স্টোর করে রাখা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি-ভিডিও, সৃজনশীল কোনো কাজ, আর্থিক লেনদেনের বিবরণ— এ ধরনের জিনিসগুলোও সাইবার অপরাধীদের হাতে পড়লে আপনি হেনস্তার শিকার হতে পারেন। আপনার কাছে অর্থ দাবি করা হতে পারে; পেশাগত কোনো কাজ বাধাগ্রস্ত করার জন্য জোর করা বা ভয়ভীতি দেখানো হতে পারে। বা এমন কোনো সংলাপে না গিয়েই সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হতে পারে ইন্টারনেটে— যা থেকে আপনি হয়তো পড়তে পারেন মানসিক চাপের মুখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-কমার্স, অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এটিও হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধীদের অন্যতম টার্গেটের জায়গা। ফলে আপনি যদি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে এ ধরনের অনলাইন আর্থিক লেনদেন করে থাকেন, তাহলে আপনার আরও সতর্ক থাকা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরী। এবং অল্প কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমেই আপনি অনেকখানি বাড়িয়ে নিতে পারেন আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের নিরাপত্তা।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহৃত কম্পিউটারের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম জায়গাগুলো হলো: ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ফিশিং অ্যাটাক… ইত্যাদি। যেগুলোর মাধ্যমে কোনো সাইবার অপরাধী আপনার কম্পিউটারে অনুপ্রবেশ, ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নেওয়া; কোনো অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার পেয়ে যাওয়া; ইত্যাদি অনেক কিছু করতে পারে, যেগুলো আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হবে। তবে অল্প কয়েকটি বিষয়ে একটু নজর দিলেই আপনি হ্যাকারদের এমন প্রচেষ্টাকে অনেকখানি নস্যাৎ করে দিতে পারেন।

কম্পিউটারের সুরক্ষা

ছবি: পিক্সাবে

লগইন পাসওয়ার্ড

শুরুতেই, আপনার কম্পিউটারে লগইনের জন্য বেছে নিন একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, বা পাসফ্রেজ। এটি আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তার একেবারে শুরুর একটি ধাপ। আপনি যদি অন্যান্য অনেক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেন, কিন্তু পাসওয়ার্ডটি রেখে দিন “১২৩৪৫৬” বা “asdfgh”; তাহলে খুব বেশি লাভ হবে না। হ্যাকাররা সহজেই আপনার কম্পিউটারে হানা দিতে পারবে। ফলে, শুরুতেই কম্পিউটারে লগইনের জন্য বেছে নিন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বা পাসফ্রেজ

নির্দিষ্ট সময় কম্পিউটারে কোনো কাজ না করা হলে স্ক্রিনসেভার চলে আসার অপশনটি চালু রাখুন, এবং আবার পিসিতে ঢুকতে চাইলে পাসওয়ার্ড দিতে হবে— এমন ব্যবস্থা করুন। যেন আপনি কিছু সময় আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে না থাকলেও কেউ সেখানে উঁকিঝুঁকি না দিতে পারে।

আরও বেশি সতর্ক হতে চাইলে দুইটি বা তিনটি লগইন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন। যেখানে কম্পিউটারের অনেক ফাংশন বরাদ্দ থাকবে শুধু অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাকাউন্টের জন্য। ফলে সাধারণ একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কম্পিউটারে ঢুকে পড়তে পারলেও, অন্যান্য ফাংশনে ঢুকতে হলে হ্যাকারকে পেরোতে হবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অংশের বাধা। এমন পরিস্থিতিতে আপনি অন্য সাধারণ অ্যাকাউন্টটি দিয়ে লগইন করে আপনার প্রাত্যহিক সব কর্মকাণ্ড চালাবেন। যদি সেই অ্যাকাউন্টের ভেতরে ঢুকে কোনো ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস অন্য কিছুতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তাহলে সেটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পাসওয়ার্ড চাইবে, এবং আপনি সতর্ক হয়ে যেতে পারবেন।

ফায়ারওয়াল

কম্পিউটার ও ল্যাপটপের সুরক্ষায় এর পরেই আসে ফায়ারওয়ালের প্রসঙ্গ। এখনকার অধিকাংশ অপারেটিং সিস্টেমেই ফায়ারওয়াল নিজে থেকে সক্রিয় থাকায়, অনেকেই এটির কথা খুব বেশি খেয়াল রাখেন না। কিন্তু কম্পিউটারের সুরক্ষায় ফায়ারওয়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বাইরের নেটওয়ার্ক এবং আপনার কম্পিউটারের মধ্যে তৈরি করে একটি সুরক্ষা দেয়াল, যেটি সন্দেহজনক ও ক্ষতিকর ডেটা প্যাকেট কম্পিউটারে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

এখনকার প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার পর এই ফায়ারওয়াল নিজে থেকেই সক্রিয় থাকে। এবং আপনাকে এমন সন্দেহজনক ফাইল ট্রান্সফার বা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক করে। ফায়ারওয়ালের এই রিকমান্ডেড সেটিংসগুলো কম্পিউটারে চালুই রাখুন। ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা কিছু সফটওয়্যার বা গেম ইন্সটল করার সময় আপনাকে বলা হতে পারে ফায়ারওয়াল বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু আপনি যদি সত্যিই কম্পিউটারের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন, তাহলে ফায়ারওয়াল বন্ধ না করে আপনার বরং সেই সফটওয়্যার ব্যবহার বা গেমটি খেলার চেষ্টাই বাদ দেওয়া উচিৎ। বা সেটির লাইসেন্স করা কপি ব্যবহার করা উচিৎ।

অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার

কম্পিউটারের নিরাপত্তার আরেকটি প্রধান ধাপ: শক্তিশালী একটি অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা সফটওয়্যারের পরিবর্তে লাইসেন্স করা লিগ্যাল কপি ব্যবহার করাই ভালো। কারণ লাইসেন্স করা কপিটির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফিচার এবং ভাইরাস ডেটাবেজ নিয়মিত আপডেট হবে, যে নিশ্চয়তা ডাউনলোড করা সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে দেওয়া যায় না। আবার লাইসেন্সড কপির ক্ষেত্রে আপনি প্রয়োজনে বাড়তি সহায়তাও চাইতে পারবেন সফটওয়্যার কোম্পানির কাছ থেকে। আপনার চাহিদা ও পছন্দমতো এমন একটি আপডেটেড লাইসেন্স করা অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইন্সটল করুন। এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরো কম্পিউটার স্ক্যানের অপশন চালু রাখুন। এতে করে কখনো যদি ক্ষতিকর কোনো কিছু আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করেও যায়, সেটি আপনি দ্রুত সনাক্ত করতে পারবেন এবং ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

কম্পিউটারের সুরক্ষা

ছবি: পিক্সাবে

সিস্টেম আপডেট ও ডেটা এনক্রিপ্ট

কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখার আরেকটি প্রধান শর্ত: অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো নিয়মিত আপডেট রাখা। এতে করে সেগুলো সর্বশেষ ঝুঁকি-হুমকিগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারবে, এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। আপনাকে যেন এমন আপডেটের দিকে সব সময় খেয়াল রাখতে না হয়— সেজন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেটের অপশন চালু রাখতে পারেন।

আপনার কম্পিউটারে যদি এমন কোনো সংবেদনশীল ডেটা থাকে, যেগুলো আপনি কোনোভাবেই চান যে অন্য কারো হাতে পড়ুক; তাহলে সেই বিশেষ ফাইল বা ডেটাগুলো এনক্রিপ্ট করে রাখার উদ্যোগ নিতে পারেন। এতে কম্পিউটারের দখল অন্য কারো হাতে চলে গেলেও সেই ফাইলগুলো সুরক্ষিত থাকবে। এছাড়াও, ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য নিয়মিত বিরতিতে সেগুলো অন্য কোথাও ব্যাকআপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।

বাইরের কোনো ডিভাইস কম্পিউটারে যুক্ত করার সময়ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। যেমন, আপনি যদি কম্পিউটারে কোনো পেনড্রাইভ বা এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ সংযুক্ত করতে চান, তাহলে শুরুতেই সেই ডিভাইসগুলি স্ক্যান করে নিন অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে। যদি সেখানে কোনো ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে— তাহলে কোনো ধরনের ডেটা ট্রান্সফার থেকে বিরত থাকুন। ডিভাইসটি ভালোমতো ভাইরাসমুক্ত করে নেওয়ার পর সেটি আবার কম্পিউটারে যুক্ত করুন।

ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা

বর্তমান সময়ে, এটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে আপনার কম্পিউটারের সুরক্ষায় সবচেয়ে বড় বিষয়। এবং এখানে আপনার ভূমিকাই মূখ্য। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অল্প কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে, কিছু বিষয় সতর্কভাবে খেয়াল করলে আপনি নিজেই হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে নিজেকে অনেকখানি রক্ষা করতে পারবেন।

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারের আগপর্যন্ত কম্পিউটারে হামলার জন্য যেসব ক্ষতিকর সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হতো, সেগুলো পরিচিত ছিল কম্পিউটার ভাইরাস নামে। এখনও এটির প্রাসঙ্গিকতা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে ভাইরাসসহ, অন্যান্য অ্যাডওয়্যার, র‌্যানসামওয়্যার, স্পাইওয়্যার, ট্রোজান ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষতিকর ও সন্দেহজনক অ্যাপ্লিকেশনকে এখন ডাকা হয় ম্যালওয়্যার নামে। আক্ষরিকভাবেই, ‘malicious’ ও ‘software’— এই দুই শব্দের সমন্বিত সংক্ষিপ্ত রূপ ‘malware’। এবং সাইবার হামলার জন্য এটিই এখন সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও ব্যবহৃত।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাইবার অপরাধীরা এসব ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাংকিং সংক্রান্ত তথ্য, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের লগইন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। কখনো কখনো এমন ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে নজরদারিও চালানো হয়। এমন ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার আপনার ওয়েবক্যাম ও মাইক্রোফোন থেকে রেকর্ড করতে পারে, কিবোর্ডে কোন বাটনগুলোতে চাপ দিচ্ছেন— তা রেকর্ড করতে পারে। কিছু ম্যালওয়্যার আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের কিছু প্রোগ্রাম অকেজো করে দিতে পারে, পাসওয়ার্ড চুরি করে নিতে পারে, ইমেইল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র কপি করে নিতে পারে… এবং আরও অনেক কিছু।

এবং এসব ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করানোর জন্য অনেক ধরনের প্রতারণামূলক কৌশলের আশ্রয় নেয় সাইবার অপরাধীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রলুব্ধ করা হয় কোনো লিংকে ক্লিক করার জন্য বা কোনো ফাইল ওপেন করার জন্য। এই লিংক আসতে পারে ইমেইলের মাধ্যমে, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ বা টুইটার বার্তার মাধ্যমে, এমনকি পোস্ট করা হতে পারে ফেসবুক কমেন্ট আকারে। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ম্যালওয়্যার হামলা চালানো হচ্ছে— তার আগ্রহ, পরিসর বিবেচনা করে হামলার ধরন বিভিন্ন রকমের হতে পারে।

যেমন, লেবাননে, বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে ম্যালওয়্যার হামলার জন্য হ্যাকাররা সেটিকে এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেন সেটি সিগন্যাল ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো নিরাপদ যোগাযোগের টুল মনে হয়। ইথিওপিয়ায় এমন একটি ম্যালওয়্যার সাজানো হয়েছে অ্যাডোব ফ্ল্যাশ আপডেটের ছদ্মবেশে। এবং তিব্বতের অ্যাক্টিভিস্টদের টার্গেট করার জন্য হ্যাকাররা এমন পিডিএফ ফাইলের ছদ্মবেশে ম্যালওয়্যার তৈরি করেছে, যেটি দেখে মনে হবে তা অন্য কোনো তিব্বতী অ্যাক্টিভিস্ট পাঠিয়েছে।

কম্পিউটারের সুরক্ষা

ছবি: পিক্সাবে

ফলে, এধরনের ছদ্মবেশী ম্যালওয়্যারের ফাঁদ এড়াতে হলে আপনাকে সতর্ক হতে হবে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কিছু বিষয়ের দিকে রাখতে হবে সতর্ক দৃষ্টি।

  • ইন্টারনেট ব্রাউজারে একটি অ্যান্টিভাইরাস এক্সটেনশন ইন্সটল করে নিতে পারেন। বা ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে সেটি আপনাকে অনেক সন্দেহজনক ওয়েবসাইট সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক করতে পারবে।
  • ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় যেখানে সেখানে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। প্রায়ই দেখা যায় কোনো কোনো ওয়েবসাইটে পপ-আপ অ্যাড বা কোনো জরিপে অংশ নেওয়ার বার্তা আসে। এগুলোতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। হয়তো এমন কোনো অ্যাডে ক্লিক করার মাধ্যমেই আপনি নিজের অজান্তে একটি ম্যালওয়্যারকে সুযোগ করে দিচ্ছেন হামলা করার; বা জরিপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দিয়ে ফেলছেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। সবচেয়ে আদর্শ পরিস্থিতি হলো: শুরু থেকেই ব্রাউজারে একটি অ্যাডব্লকার ব্যবহার করুন। এতে করে এমন বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন আপনার সামনে আসারই সুযোগ পাবে না। আবার আপনি পরিচিত ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনগুলোও দেখতে পারবেন।
  • অনেক পপ-আপ অ্যাড বা ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন আপনার ব্রাউজারে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য নিয়মিত বিরতিতে ব্রাউজারের ক্যাশ, কুকি ও হিস্টরি মুছে ফেলুন।
  • বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য হিসেবে পরিচিত— এমন সাইটগুলোই ভিজিট করুন। অনেক সময় ফায়ারওয়াল বা অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার কিছু সাইটে ঢোকার সময় সতর্ক করে। এরকম অনির্ভরযোগ্য সাইট ভিজিট থেকে বিরত থাকুন।
  • ইন্টারনেট থেকে বিনামূল্যে পাইরেটেড সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করার প্রবণতা কমিয়ে ফেলুন। এধরনের পাইরেটেড সফটওয়্যার বা গেম, ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। কোনো সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করার সামর্থ্য যদি আপনার তাৎক্ষণিকভাবে না থাকে, তাহলে সমগোত্রীয় কোনো ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের কথা বিবেচনা করুন।
  • ইমেইলে; হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামের মতো ম্যাসেঞ্জিং অ্যাপে; বা ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা যেকোনো লিংকেই চট করে ক্লিক করে বসবেন না। শুরুতেই চিন্তা করুন: লিংকটিতে ক্লিক করা কি খুব জরুরি? অনেক সময়ই সন্দেহজনক এমন লিংক ইউআরএল শর্টেনার দিয়ে ছোট করে পোস্ট করা হয়। (যেমন bit.ly, t.co)। আপনি যদি খুবই কৌতুহলী হন, তাহলে https://unshorten.it/ এর মতো সার্ভিস দিয়ে দেখে নিন: ছোট করা ইউআরএলটির পেছনে কী আছে। সেটি কি নির্ভরযোগ্য কোনো সাইট নাকি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে? যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহও থাকে, তাহলে সেই লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
  • যে কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় খেয়াল করুন: ইউআরএলটিতে “https://” আছে নাকি http://। যদি s না থাকে – যেটি দিয়ে secure বোঝানো হয় – তাহলে সেই সাইটগুলোতে ভিজিট করা থেকে বিরত থাকুন।
  • ইন্টারনেট থেকে যে কোনো কিছু ডাউনলোড করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করুন। ইমেইল থেকে কোনো অ্যাটাচমেন্ট ডাউনলোড করার আগে তা স্ক্যান করে নিন। অপরিচিত বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো জায়গা থেকে কিছু ডাউনলোডের লিংক আসলে— সেটি না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বা এমন কোনো কিছু ডাউনলোড করে ফেললেও, সেখানকার কোনো ফাইল ওপেন করার আগেই সেটি একবার স্ক্যান করে নিন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে। সেখানে যদি কোনো ধরনের সতর্কতামূলক বার্তা আসে, তাহলে সেটি আর ওপেন না করে সরাসরি ডিলিট করে দেওয়াই ভালো।
  • অনেক সময় হ্যাকাররা আপনার নিত্য ব্যবহার্য্য বা খুবই পরিচিত কিছু ওয়েবসাইটের মতো করে সাজাতে পারে অন্য একটি ওয়েবসাইট। এবং সেখানে আপনাকে লগইন করার আহ্বান জানানো হতে পারে। আপনি যদি সত্যিই সেখানে আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে ফেলেন, তাহলে সেই লগইনের তথ্য ততক্ষণে চলে গেছে হ্যাকারদের হাতে। যা দিয়ে তারা আপনার সত্যিকারের অ্যাকাউন্টটিতে লগইন করে ফেলতে পারবে এবং আপনি ঝুঁকির মুখে পড়বেন। অনলাইনে একসঙ্গে এমন অনেক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার ও সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবহার করতে পারেন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

অনলাইনে কোন লিংকে ক্লিক করবেন আর কোথায় করবেন না— তা নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা দেখুন এই গাইডটি

কম্পিউটারের সুরক্ষায় উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে খুব বেশি সময়ও দিতে হবে না। শুধু বিষয়গুলোর কথা মাথায় রাখলেই চলবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পথপদ্ধতিগুলোও খুব বেশি সময়সাপেক্ষ বা জটিল না। ফলে সেগুলো আপনি সহজেই প্রয়োগ করতে পারেন। তবে এতো কিছুর পরও যদি আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে— তাহলে কী করবেন?

শুরুতেই দেখুন: অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার সেটি মোকাবিলা করতে পারছে কিনা। যদি না পারে, তাহলে পুরো ডিভাইসটি ফরম্যাট দিয়ে আবার নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলের কথা বিবেচনা করতে পারেন। আপনি যদি এই হামলার পেছনে কোনো এজেন্সি বা নজরদারি প্রকল্পের সংযোগ খুঁজে পান বা আছে বলে আশঙ্কা করেন, তাহলে আপনার ডিভাইসটি ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

পাসওয়ার্ড নাকি পাসফ্রেজ: পাসফ্রেজ কী? কেন এটি ব্যবহার করবেন?

পাসওয়ার্ড নাকি পাসফ্রেজ: পাসফ্রেজ কী? কেন এটি ব্যবহার করবেন?

অ্যাকাউন্টে লগইনের জন্য সাধারণত পাসওয়ার্ড শব্দটিরই ব্যবহার হয় বেশি। বলা হয় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা। কিন্তু ডিজিটাল পরিসরে পাসওয়ার্ড এখন যেন একটু সেকেলে হয়ে পড়েছে। হ্যাকাররা এতো আধুনিক সব পদ্ধতি গড়ে তুলেছে, যেগুলো দিয়ে সচরাচর তৈরি করা ৮-১৪ ওয়ার্ডের নানা ধরনের পাসওয়ার্ড সহজেই ভেঙে ফেলা যাচ্ছে। ফলে অনলাইন অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় এখন আর পাসওয়ার্ড যথেষ্ট হচ্ছে না। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে পাসফ্রেজ-এর।

২০২১ সালে হ্যাকারদের একটি ফোরামে  ফাঁস করা হয় হ্যাকিংয়ের শিকার ৮৪৫ কোটি পাসওয়ার্ডের একটি তালিকা। এটিসহ অন্যান্য আরও অনেক পাসওয়ার্ড এরই মধ্যে জেনে যাওয়ায় হ্যাকারদের কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও অ্যালগরিদমগুলো সহজেই অনুমান করতে পারে: মানুষ কিভাবে, কোন প্যাটার্নে পাসওয়ার্ড তৈরি করে, এবং দ্রুত সেসব পাসওয়ার্ড অনুমানও করে ফেলতে পারে। ব্যবহৃত পাসওয়ার্ডের ডেটাবেজ যতো ভারী হতে থাকবে— ততই বাড়তে থাকবে হ্যাকারদের সাফল্যের সম্ভাবনা। ফলে আপনাকেও চিন্তা করতে হবে নতুন নতুন উপায়ে অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার উপায়-কৌশল। আর এখানেই আসে পাসফ্রেজের প্রাসঙ্গিকতা।

পাসফ্রেজ কী?

পাসফ্রেজকে পাসওয়ার্ডেরই উন্নত আরেকটি সংস্করণ বলা যেতে পারে। পাসওয়ার্ড সাধারণত হয় একটি বা দুইটি শব্দ জোড়া দিয়ে। সেখানে আপনি সংখ্যা, সংকেত, ছোট-বড় হাতের অক্ষরের সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করেন। পাসওয়ার্ডে অক্ষর সংখ্যা যত বেশি হবে, সংখ্যা-সংকেতের বৈচিত্র্য যত বেশি থাকবে— পাসওয়ার্ডটি তত শক্তিশালী হবে। কিন্তু এটি যত জটিল হবে, তা মনে রাখাও তত দুরুহ হয়ে উঠবে। ধরা যাক, আপনি পরিচিত কোনো শব্দ ছাড়াই এলোমেলোভাবে একটি পাসওয়ার্ড ঠিক করলেন সেটি শক্তিশালী করার জন্য। “JmtY6!ve08&yU“। এটি শক্তিশালী হবে ঠিকই, কিন্তু মনে রাখা হবে খুবই কষ্টকর।

অন্যদিকে একটি পাসফ্রেজ তৈরি হয় কয়েকটি শব্দ দিয়ে। সেখানে অক্ষরের সংখ্যা ২৫ বা ৩০ থেকে ৫০… এমনকি ১০০ পর্যন্তও হতে পারে। এটি অনেক বড় মনে হলেও, সেখানকার শব্দগুলো আপনি সহজেই মনে রাখতে পারবেন। যেমন আপনি যদি “Rain Playing Moth Hunter” – এমন এলোমেলো কয়েকটি শব্দ দিয়ে একটি পাসফ্রেজ তৈরি করেন— তাহলে তা ভেঙে ফেলা তুলনামূলক কঠিন হবে। একইসঙ্গে এটি মনে রাখাও সহজ। এভাবে কয়েকটি শব্দের সমন্বয়ে তৈরি পাসওয়ার্ডকে বলা হয় পাসফ্রেজ। শব্দগুলোর মাঝে আপনি স্পেস রাখতেও পারেন, নাও রাখতে পারেন।

কেন পাসফ্রেজ ব্যবহার করবেন

অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ভেঙে ফেলার একটি প্রধান কৌশল “ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক”। এখানে হ্যাকাররা শক্তিশালী সফটওয়্যারের মাধ্যমে একের পর এক পাসওয়ার্ড প্রয়োগ করতে থাকে, যতক্ষণ না সঠিক পাসওয়ার্ডটি পাওয়া যায়।

মানুষ সাধারণত পরিচিত যেসব শব্দ দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করে—সেগুলো এদিক-সেদিক করে, অক্ষরের জায়গায় চিহ্ন বা সংখ্যা বসিয়ে একের পর এক পাসওয়ার্ড অনুমান করে যেতে থাকে সফটওয়্যারগুলো। একটি হিসেব অনুযায়ী, সাধারণত ৮-১০ অক্ষরের একটি পাসওয়ার্ডে যদি ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, নম্বর, সংকেত— সব কিছুই থাকে; তাহলে ৮ অক্ষরের পাসওয়ার্ডটি ভেঙে ফেলা যাবে ৩৯ মিনিটে, ১০ অক্ষরের পাসওয়ার্ডটি ভেঙে ফেলা যাবে ৫ মাসের মধ্যে।

কিন্তু আপনি যদি শুধু ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার করে একটি পাসফ্রেজ তৈরি করেন, যেখানে মাত্র ১৪টি অক্ষর আছে—তাহলে সেটি ভেঙে ফেলতে সময় লাগবে ৫১ বছর। এবং এমন একটি পাসফ্রেজ আপনি সহজে মনেও রাখতে পারবেন। এখন ১৪টির জায়গায় আপনি যদি ২৫ বা ৩০ অক্ষরের একটি পাসফ্রেজ ব্যবহার করেন— তাহলে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। হ্যাকারদেরও সেটি ভেঙে ফেলতে আরও ঘাম ঝরাতে হবে।

এর সঙ্গে যদি আপনি সেই পাসফ্রেজে কিছু অক্ষর, সংকেত, সংখ্যার বৈচিত্র্য আনেন— তাহলে সেটি ভেঙে ফেলা হয়ে উঠবে আরও কষ্টকর। যেমন, আগের উদাহরণটিই যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে “Rain Playing Moth Hunter”-কে আপনি বদলে দিতে পারেন এভাবে: “Ra^n P1@ying M0th HunTer”। এতে পাসফ্রেজটি আরও বিশৃঙ্খল হবে, এবং সেটি অনুমান করাও কঠিন হয়ে পড়বে। এভাবে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে চাইলে ৫, ৬ বা ৭ শব্দের পাসফ্রেজও তৈরি করতে পারেন। যেটি সহজে মনেও রাখা যাবে আবার সহজে ভাঙাও যাবে না।

আরও যেখানে পাসফ্রেজ অপরিহার্য

শুধু অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষাই নয়, আরও একটি দিক দিয়ে পাসফ্রেজের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো গোপনীয় বা সংবেদনশীল নথিপত্র এনক্রিপ্ট করে সংরক্ষণ করা বা অন্য কোথাও শেয়ারের জন্য এনক্রিপ্ট করার ক্ষেত্রে। যেমন, বিখ্যাত হুইসেলব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেন তাঁর বার্তাগুলো পাঠানোর সময় নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন যে সেগুলো সাত শব্দের একটি পাসফ্রেজ দিয়ে এনক্রিপ্ট করা আছে কিনা। এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য কারো হাতে যেন না পড়ে যায়— তা নিশ্চিতের জন্য সেটি এনক্রিপ্ট করে রাখার ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ডের চেয়ে পাসফ্রেজ অনেক বেশি কার্যকরী।

পাসফ্রেজ নির্ধারণে করণীয়

পাসফ্রেজ, এলোপাথারিভাবে বেছে নেওয়া কয়েকটি শব্দ হতে পারে; আপনার কাছে অর্থ বহন করে—এমন কোনো বাক্য হতে পারে; বা হতে পারে কোনো উক্তি বা গানের লাইন। এমন কিছু শব্দ-সমাহার যা আপনি সহজে মনে রাখতে পারবেন। অনলাইনে পাসফ্রেজ বেছে নেওয়ার কিছু টুলও আছে। যেখানে এলোমেলোভাবে কয়েকটি শব্দ তুলে দেওয়া হয়। তবে কম্পিউটারের বাছাই করে দেওয়া পাসফ্রেজের তুলনায় নিজে নিজেই কিছু একটা ভেবে বের করা আদর্শ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সেটি হয়তো এমন একটি বাক্য হতে পারে যার মর্মার্থ শুধু আপনিই ‍বুঝবেন। ফলে আপনার জন্য সেটি মনে রাখাও সহজ হবে। যেমন, “once wished to be a reptilian alien”। পরিচিত কোনো গান বা উক্তিকে নিজের মতো করে বদলে দিয়ে সেটিকেও ব্যবহার করতে পারেন পাসফ্রেজ হিসেবে।

তবে বিখ্যাত মানুষের উক্তি, পরিচিত গান বা বইয়ের উদ্ধৃতি হুবহু পাসফ্রেজ হিসেবে ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ হ্যাকাররা যখন এসব পাসফ্রেজ ভাঙার লড়াইয়ে নামবে তখন তাদের প্রথম দিকের লক্ষ্যবস্তু থাকবে এসব জনপ্রিয় বই, গান বা উদ্ধৃতি।

আপনি যদি পাসফ্রেজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে চান, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন ডাইসওয়্যার। এখানে লুডুর মতো ডাইস চালিয়ে শব্দ নির্ধারণ করা হয়। এভাবে সনাক্ত করা ৪ বা ৫ শব্দের পাসফ্রেজটি হবে বেশ বিশৃঙ্খল। ফলে বেশি শক্তিশালী।

শেষ কথা

পাসওয়ার্ড বা পাসফ্রেজ; যা-ই হোক না কেন; অনলাইনে অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় থাকবে অপরিবর্তনীয়। যেমন, প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড বা পাসফ্রেজ ব্যবহার করতে হবে। যেন কোনো এক জায়গার ডেটা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়লেও অন্য অ্যাকাউন্টগুলো সুরক্ষিত থাকে। অনেকগুলো অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। পড়ুন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কেন ব্যবহার করবেন?

আদর্শ পরিস্থিতি হতে পারে এমন: আপনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার দিয়ে আপনার সব অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখছেন এবং পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মাস্টার পাসওয়ার্ডটির জন্য বেছে নিচ্ছেন একটি শক্তিশালী পাসফ্রেজ, যেটির অর্থ শুধু আপনার কাছেই বোধগম্য হবে। এবং পাসফ্রেজটির কয়েকটি অক্ষর, সংখ্যা বা সংকেত দিয়ে বদলে দিলে সেটি হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার: কেন ব্যবহার করবেন?

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার: কেন ব্যবহার করবেন?

ইন্টারনেটের শুরুর দিনগুলোতে হয়তো হাতে গোনা কয়েকটি অ্যাকাউন্টের তথ্য মনে রাখাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনাকে অনেক ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এবং সেসব অ্যাকাউন্টের জন্য একটি পাসওয়ার্ড দিতে হয়। মনে রাখার সুবিধার্থে অনেকেই একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করেন বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য। কিন্তু এটি মোটেও নিরাপদ নয়। একটি পাসওয়ার্ড চুরি গেলেই সব একাউন্ট হাতছাড়া! তাই অনেকে ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড দেন। এটিই নিরাপদ অভ্যাস। কিন্তু তারা আবার সেগুলো মনে রাখতে গিয়ে হিমশিম খান। বেশ কিছু দিন পর কোনো অ্যাকাউন্টে ঢুকতে গিয়ে হয়তো দেখেন, সেটির পাসওয়ার্ড মনে নেই।

ঝামেলা এড়াতে, এবং সহজে মনে রাখার জন্য অনেকেই এমন সহজ পাসওয়ার্ড বেছে নেন, যা অনায়াসে ভেঙে ফেলা যায়। ফের তৈরি হয় নিরাপত্তা জটিলতা। তার সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই। তাহলে, অনলাইনে আপনার সব অ্যাকাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করবেন কীভাবে? এমন একটা ব্যবস্থা, যেখানে আপনাকে ডজন ডজন পাসওয়ার্ড মনে রাখেতে হবে না, আবার অ্যাকাউন্টটিও সুরক্ষিত থাকবে? উত্তর: পাসওয়ার্ড ম্যানেজার।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কী?

এটি একটি অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার, যা আপনার সব অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড তৈরি করে এবং সেটি মনে রাখে। আপনাকে শুধু পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে ঢোকার জন্য একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড (মাস্টার পাসওয়ার্ড) বেছে নিতে হবে এবং শুধু সেটিই মনে রাখতে হবে। এরপর আপনার ১০ বা ১০০; যত অ্যাকাউন্টই থাকুক না কেন; সেগুলোর প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা শক্তিশালী পাসওয়ার্ডটি বেছে নেবে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। আপনাকে আর সেগুলো মনেও রাখতে হবে না। আবার শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের কারণে আপনার অ্যাকাউন্টটিও সুরক্ষিত থাকবে।

কেন এটি নিরাপদ

প্রশ্ন জাগতেই পারে যে: একটি জায়গাতেই সব পাসওয়ার্ড জমা থাকলে, সেখান থেকেও তো এসব তথ্য অন্য কেউ হাতিয়ে নিতে পারে। কিভাবে নিশ্চিত হবো যে: সেখানে পাসওয়ার্ডগুলি সুরক্ষিত থাকবে?

ভালো একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকে। প্রথমেই: ব্যবহারকারী তাঁর সব ডেটা এনক্রিপ্ট করে রাখেন। ফলে এখানে থাকা পাসওয়ার্ডগুলো সফটওয়্যারের মেমোরিতে জমা থাকলেও তা সেই কোম্পানির কোনো ব্যক্তি দেখতে পারে না। দ্বিতীয়ত: ব্যবহারকারীর মূল মাস্টার পাসওয়ার্ডটি সাধারণত পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মেমোরিতে জমা রাখা হয় না। এবং এর সঙ্গে রয়েছে টু-ফ্যাক্টর-অথেনটিকেশন বা সিকিউরিটি কী। আপনার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে জমা থাকা তথ্যগুলোর দিকে নজর দিতে গেলে যে কোনো হ্যাকারকে এই তিন স্তরের নিরাপত্তা ভাঙতে হবে, যা বেশ দুরুহ কাজ। এবং এটি আপনার তথ্যগুলো কোনো থার্ড পার্টি কোম্পানি বা ওয়েবসাইটের কাছে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও অনেক কমিয়ে দেয়।

এটি কিভাবে কাজ করে?

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার প্রতিটি ওয়েবসাইট অ্যাকাউন্টের জন্য একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড নিজে থেকেই নির্ধারণ করে। বড় হাতের অক্ষর, প্রতীক, সংখ্যা ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি করা এই পাসওয়ার্ডটি হয় শক্তিশালী। যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে, ধরা যাক অ্যামাজনে লগইন করতে যাবেন, তখন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই ওয়েবসাইটের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা শক্তিশালী পাসওয়ার্ডটি সেখানে ফিলআপ করে দেবে। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। এতে করে আপনি অন্য কোনো ফিশিং ওয়েবসাইটে লগইন তথ্য দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে পারবেন। কারণ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার শুধু amazon.com—এই ডোমেইনের জন্যই সেই নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডটি ফিলআপ করবে। ধরা যাক আপনি ‍account-amazon.com—  এই অ্যাকাউন্টে লগইন করতে চাইলেন। কিন্তু এখানে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সেই পাসওয়ার্ডটি ফিলআপ করবে না। কারণ এটি সত্যিকারের অ্যামাজনের সাইট নয়।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার সব ধরনের ডিভাইস, ব্রাউজার ও অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। এবং আপনি আপনার ডিভাইসগুলোর সঙ্গে এটির সমন্বয়ও করে নিতে পারবেন। আপনার যে কোনো অ্যাকাউন্টে অন্য কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে এটি আপনাকে সতর্ক করবে, এবং আপনি দ্রুত সেই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডটি বদলে ফেলতে পারবেন। বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে আপনি সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডই কিছু সময় পর পর বদলে নিতে পারবেন। সেগুলো কখনোই মনে রাখার কথা আপনার মাথায় নিতে হবে না। শুধু পাসওয়ার্ডই নয়, কিছু পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে আপনি অল্প কিছু সংবেদনশীল তথ্য-ডেটাও এনক্রিপ্ট করে রাখতে পারবেন।

কোন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করবেন?

অনলাইনে এখন অনেক পাসওয়ার্ড ম্যানেজার পাওয়া যায়। তবে ভালো সেবা ও মানের জন্য যাদের কথা বারবার উঠে আসে, সেগুলোর মধ্যে আছে: ওয়ান পাসওয়ার্ড, লাস্টপাস, ড্যাশলেন, কিপাস (ওপেন সোর্স)। কিছু ফিচারের দিক থেকে হয়তো তাদের মধ্যে খানিক ভিন্নতা পাওয়া যাবে। কিন্তু সবারই কাজের পদ্ধতি প্রায় একই ধরনের। এবং সবগুলোই ব্যবহার করা যায় বিনামূল্যে। অর্থের বিনিময়ে আরও কিছু বাড়তি সুবিধা নেওয়ারও সুযোগ আছে।

ওয়ান পাসওয়ার্ড-এ আরেকটি বিশেষ ফিচার আছে ভ্রমণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি নিয়ে। এটির ট্রাভেল মোড ফিচারের মাধ্যমে আপনি কোথাও ভ্রমণের সময় আপনার অ্যাকাউন্টটি নিস্ক্রিয় করে রাখতে পারবেন এবং নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আবার সেটি সচল করতে পারবেন। এতে যাত্রাপথে কোনো ডেটা চুরি যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ওয়ান পাসওয়ার্ডের একটি বিশেষ সেবা আছে সাংবাদিকদের জন্য। এখানে নিবন্ধনের মাধ্যমে সাংবাদিকরা এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন বিনামূল্যে।

মাস্টার পাসওয়ার্ড নিয়ে সতর্ক থাকুন

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করলে আপনাকে অন্য কোনো শক্তিশালী পাসওয়ার্ডই আর মনে রাখতে হবে না। তবে এই ম্যানেজারে ঢোকার জন্য আপনি যে মাস্টার পাসওয়ার্ডটি নির্ধারণ করে দেবেন — সেটি আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। মাস্টার পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে, আপনার পাসওয়ার্ড স্টোর চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এবং আপনি অন্য সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হারিয়ে ফেলতে পারেন।

একই সঙ্গে এই মাস্টার পাসওয়ার্ডটি হতে হবে শক্তিশালী, যেন তা সহজে ভাঙা না যায়। এবং এই পাসওয়ার্ডটি কোথাও লিখে না রেখে মনে রাখুন। এতে এটি অন্য কারও হাতে পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। কিভাবে এমন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন, যা সহজে মনেও রাখতে পারবেন, তা জানতে পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রথম শর্ত শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। আপনার পাসওয়ার্ড নিরাপদ তো?

অনলাইনে কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাই শতভাগ সফল হবে- এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে সেই আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায় পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মতো টুল ব্যবহারের মাধ্যমে। কারণ একেকটি অ্যাকাউন্টের জন্য একের পর এক নতুন পাসওয়ার্ড তৈরিতে সময় নষ্ট করার চেয়ে, একটি নিরাপদ সিন্দুকে (পাসওয়ার্ড ম্যানেজার) সব পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করাই লাভজনক। ঠিক যেমনটি বাড়ির দামী জিনিসপত্র নিরাপদের রাখার জন্য আমরা করে থাকি। তাই আপনার ঘরের মতোই, ভার্চুয়াল জগতের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবনা শুরু করুন। 

আর আপনি যদি এ সম্পর্কে আরো জানতে চান, তাহলে নিচের রিসোর্সগুলো পড়ে নিতে পারেন।