ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা: নাগরিক সমাজের জন্য একটি টুলকিট

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততা: নাগরিক সমাজের জন্য একটি টুলকিট

কৃতজ্ঞতা

এ প্রতিবেদনটি ইউএসএআইডি গ্রেটার ইন্টারনেট ফ্রিডম (জিআইএফ) প্রকল্পের অধীনে প্রকাশ হচ্ছে; প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইন্টারনিউজ ও জিআইএফ কনসোর্টিয়াম। বাংলাদেশে ডিজিটালি রাইট এই প্রকল্পের অংশীদার।

জিআইএফ, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত চার বছরের একটি প্রকল্প। এর উদ্দেশ্য সমন্বিত উদ্যোগ মডেলের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অধিকার শক্তিশালী করা; আর এটি করা হবে স্থানীয় নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলোকে সহায়তার মাধ্যমে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নিতে সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায় এবং অপ্রথাগত অ্যাক্টরদের উদ্যোগকে জোরদার করার কাজ করে থাকে।

মূল লেখক: ওয়াকেশো কিলিলো, টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর (আফ্রিকা), (জিআইএফ) ইন্টারনিউজ

পর্যালোচক: মন্তসেরাত লেগোরেতো, প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস অ্যাসোসিয়েট, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ (জিএনআই)

লিয়েন্ড্রো উইসেফেরি, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ম্যানেজার, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস

আমেরিকান জনগণের উদার সমর্থনে প্রতিবেদনটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে; তারা এ সমর্থন দিয়ে থাকে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে। এই আধেয় তৈরির দায় ইন্টারনিউজের এবং এখানে ইউএসএআইডি অথবা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি।


সূচনা

এই টুলকিটের লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোকে পরামর্শ, পথনির্দেশনা ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে শক্তিশালী করা, যেন তারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানি/সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও ভালো পরিকল্পনা করার প্রস্তুতি নিতে পারে। এই নির্দেশিকাগুলো প্রাথমিকভাবে সেই সব সংস্থা ও গবেষকদের একটা পথনির্দেশনা দেয় যারা স্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিগুলো মূল্যায়নের কাজে র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস (আরডিআর) করপোরেট অ্যাকাউন্টিবিলিটি ইনডেক্স মেথোডলজি ব্যবহার করেছে। তবে আমরা আশা করি, আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি ও মানদণ্ড ব্যবহার করেন না– এমন গবেষকদের জন্যও এই টুলকিটটি বিশেষ সহায়ক হবে।

নিম্নোক্ত বিভাগগুলোতে আমরা কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক সেরা অনুশীলনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। একই সঙ্গে টেমপ্লেট ব্যবহার করে কোম্পানির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সম্ভাব্য যোগাযোগ কৌশলগুলো দেখিয়েছি। এ থেকে আপনারা আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়গুলো আত্মস্থ করে নিতে পারবেন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিকে জবাবদিহির মধ্যে আনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা হচ্ছে কেবলই প্রথম পদক্ষেপ। বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাধীন অংশীজন, বিশেষ করে নাগরিক সমাজ যেন একটি কোম্পানিকে সামনে এগিয়ে যেতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় এবং এমন আলোচনায় কোম্পানিটিকে সম্পৃক্ত করে যা তাদের আচরণ ও অনুশীলনকে ক্রমবর্ধমানভাবে অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করে। স্বচ্ছতাকে মূল চালিকাশক্তি করলে আমরা ব্যবসায়ের নানা দিক এবং সেগুলো কীভাবে পরিচালিত হয়– তা বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা পাব।

  • আস্থা: স্বচ্ছতা একটি কোম্পানি ও তার ভোক্তাশ্রেণির মধ্যে আস্থা তৈরি করে। মানুষ যখন জানে তাদের উপাত্তগুলো কীভাবে পরিচালনা করা হয়, তখন তারা নির্দিষ্ট পরিষেবা কীভাবে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একটি নির্দিষ্ট ধরনের উপাত্ত অথবা সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোম্পানির ওপর তারা কতটা আস্থা রাখবে স্বচ্ছতা সেটাও নির্ধারণ করে। গ্রাহকের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করে থাকে এই স্বচ্ছতা।
  • জবাবদিহি: একটি কোম্পানি যখন তাদের নীতিগুলো ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে তখন এটি বড় পরিসরের অংশীজনদের জন্য সহায়ক হয়। কোম্পানিটি তাদের ঘোষিত অঙ্গীকার পালন করছে কিনা এবং তাদের কোনো আচরণ ও কার্যক্রমের কারণে মানুষের অধিকার ঝুঁকিতে পড়ছে কিনা অংশীজনরা তা অনুসরণ ও তদারকি তখন সহজ হয়।
  • প্রতিযোগিতা: কোম্পানিগুলোকে আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠতে চাপ দেওয়া এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে তাদের তুলনা করা হলে তাদের মধ্যে শীর্ষে যাওয়ার অনুপ্রেরণা তৈরি হয়, তখন তারা নিজেদের নীতিমালা ও চর্চাগুলো আরও উন্নত করে তোলার কাজে প্রতিযোগিতা করে। কোম্পানিগুলো যদি ডেটা ও প্রাইভেসি সুরক্ষার অঙ্গীকার করে মানুষ তা মূল্যায়ন করে; কারণ এর ফলে তাদের বাছাই করতে সুবিধা হয় কোন ধরনের অনলাইন সেবা বা অ্যাপ তারা ব্যবহার করবে বা করবে না।
  • আইনবিধির সঙ্গে সম্মতি: অনেক দেশে এমন অনেক আইন রয়েছে যেখানে কোম্পানিগুলোকে তাদের উপাত্ত অনুশীলনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকতে হয়। পাশাপাশি নতুন অনেক আইনও হচ্ছে যেখানে কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছতার প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং মানবাধিকারের ওপর কী প্রভাব পড়ছে তার মূল্যায়ন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন হবে। এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আলোচিত নতুন আইনের প্রাথমিক স্তরে আপনিও অবদান রাখতে পারেন। নিজ দেশের সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ ও মানবাধিকার বিষয়ক ঝুঁকিগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে আপনি তাদের অভ্যন্তরীণ সংলাপে পথনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। স্বচ্ছতার ঘাটতির মাধ্যমে একটা কোম্পানি কী ধরনের ঝুঁকি বাড়ায় তা শনাক্ত করে তাদের জন্য আপনি একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারেন।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সবচেয়ে সেরা অনুশীলন

ক. গবেষণা

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের আগে র‌্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস দলের সহায়তায় তৈরিকৃত আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি। এই গবেষণা করতে যেসব রিসোর্স প্রয়োজন পড়বে তা https://rankingdigitalrights.org/research-lab/-এ রয়েছে। এ জন্য র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস দলের কাছে ইমেইল করা যাবে info@rankingdigitalrights.org এই ঠিকানায়। 

আরডিআর রিসার্চ ল্যাবে গবেষণা প্রক্রিয়া বিশদভাবেই দেওয়া আছে, এরপরও সেখান থেকে আমরা নিচের পয়েন্টগুলো এখানে তুলে ধরছি। কোনো প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় এ পয়েন্টগুলো মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

– গবেষণার লক্ষ্য শনাক্ত করুন (ভালো হয় বৃহৎ কিংবা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে এমন কোম্পানিতে মনোযোগ দেওয়া)

– সেখানে কোন ধরনের গবেষণা হয় এবং সে গবেষণা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিনা সেটা নির্ধারণ করুন।

কোম্পানির সঙ্গে সাক্ষাতে আপনার যে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তা হলো “গবেষণার জন্য আপনি কেন আমাদের কোম্পানি বেছে নিলেন?” তাই নিশ্চিত করুন আপনি আগেই এ নিয়ে যথাযথ ভেবে রেখেছেন। প্রশ্নটির একটা সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে, সেবাগ্রহীতার সংখ্যার বিচারে আপনাদের কোম্পানিই দেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানি।

খ. উদ্ভাবন করুন স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল 

আরডিআর গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ এবং কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের নীতি ও পরিচালনার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করার পর আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে তাদের সঙ্গে কাজ করার স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল উন্নয়নের দিকে।

কীভাবে স্পষ্ট উদ্দেশ্য তৈরি করা যাবে কিছু পরামর্শ:

১. শুরুতেই আপনার লক্ষ্যগুলো চিহ্নিত করুন। কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনি কী অর্জন করতে চান? আপনি কি কোনো বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে চান? আপনি কি নীতি পরিবর্তন করতে চান? আপনি কি নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব তৈরি করতে চান? যখন আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো জেনে যাবেন, তখন আপনি আপনার উদ্দেশ্যগুলো এগিয়ে নিতে পারবেন, যা সহায়ক হবে লক্ষ্য অর্জনে।

 ২. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো সুনির্দিষ্ট। সিদ্ধান্ত নিন কোন সুনির্দিষ্ট ফলাফলগুলো আপনি কোম্পানির মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রতিবেদনে উপস্থাপন করতে চান।

৩. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো পরিমাপযোগ্য। কীভাবে জানবেন যে আপনার উদ্দেশ্যগুলো অর্জন হচ্ছে? দৃষ্টান্ত হিসাবে আপনি বলতে পারেন, “আমি আমার সাফল্য পরিমাপ করব এটা অনুসরণ করে যে এক্স কোম্পানি কতগুলো মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট নীতি প্রকাশ করছে।”

 ৪. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো অর্জনযোগ্য। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কি বাস্তবসম্মত এবং সেগুলো কি আপনার নাগালের মধ্যে আছে? তা যদি না হয় তাহলে উদ্দেশ্যগুলো নতুন করে বিন্যস্ত করার প্রয়োজন পড়বে।

৫. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলো প্রাসঙ্গিক। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কি আপনার সামগ্রিক লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? যদি তা না হয় তাহলে সেগুলোর পেছনে ছোটা আপনার জন্য অর্থপূর্ণ নাও হতে পারে।

৬. নিশ্চিত করুন আপনার উদ্দেশ্যগুলোর সময়-সীমা আছে। আপনার উদ্দেশ্যগুলো কবে আপনি অর্জন করতে চান?

উদ্দেশ্যগুলো উদ্ভাবনকালে একজনকে অবশ্যই সেই সব সুনির্দিষ্ট ডিজিটাল অধিকারগুলো বিবেচনায় নিতে হবে, যেগুলো নিয়ে তারা কথা বলতে বা কাজ করতে চায়। একই সঙ্গে যে কোম্পানিগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং যে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেছে সেগুলোও সুনির্দিষ্ট করা উচিৎ। স্পষ্ট উদ্দেশ্য কীভাবে নির্ধারণ করা যায় তার উদাহরণ আরডিআর। গবেষণা পরিচালনা ও জবাবদিহির জন্য একটা মানদণ্ড তৈরি করা এবং উপাত্ত ও তথ্য প্রদান এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো ডিজিটাল যুগে মানবাধিকার সুরক্ষা ও বিকাশে সহযোগিতা করে।

এর পরের ধাপ হলো সুস্পষ্ট কৌশল উদ্ভাবন। এটি উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর কৌশল শনাক্তে সহযোগিতা করে। কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়টি আপনি তুলে ধরতে চান এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গি আপনি গ্রহণ করবেন এবং লক্ষ্য অর্জনে কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আপনি নেবেন- কৌশল উন্নয়নের সময় এগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ।

এ ছাড়া কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার সেরা সব অনুশীলন এবং সফল কেস স্টাডিগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন, কোম্পানির নীতি অথবা অনুশীলনে পরিবর্তন এনেছে এমন সফল প্রচারাভিযান এবং ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে কোম্পানির এমন কেস স্টাডি। সবশেষে, একজনকে কোম্পানির পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা করা উচিৎ যাতে করে উপাত্ত সংগ্রহ, ব্যবহার ও সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রক্রিয়া ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বোঝাপড়াটা পরিষ্কার করা যায়। একই সঙ্গে প্রযুক্তি কীভাবে বিকশিত হয়, সেটা কীভাবে স্থাপন করা হয় এবং ডিজিটাল অধিকারের ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে কাজ করে– সেই বোঝাপড়াটাও জরুরি।

গ. কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন

যে কোম্পানির সঙ্গে আপনি সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের আগে উন্মুক্তভাবে পাওয়া যায় এমন সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে জানাটাও গুরুত্বপূর্ণ। একটি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে কীভাবে পরিচিত করবেন তা নিয়ে কয়েকটি পরামর্শ এখানে দেওয়া হলো:

  • কোম্পানির ওয়েবসাইট পড়ুন। এটা আপনাকে কোম্পানিটির ব্যবসা অনুশীলন ও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে মোটাদাগে একটা ধারণা দেবে। কোম্পানির মানবাধিকার বিষয়ক নীতি, কোম্পানির গোপনীয়তার নথি, আচরণবিধি, বার্ষিক প্রতিবেদন এবং সামাজিক বিষয়াদিতে জন বিবৃতি, ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কোম্পানির অবস্থান (যা তারা অঙ্গীকার করেছে সেটা সহ) সম্পর্কে জানতে এ সব নথি দেখতে হবে। কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সময় এই সব তথ্য কাজে লাগতে পারে কারণ তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে আপনি সুবিধা পেতে পারেন।
  • কোম্পানির সাংগঠনিক কাঠামোর দিকে তাকান। মালিকানা সম্পর্কে জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা কি সম্পূর্ণরূপে নিজস্ব মালিকানাধীন নাকি অন্য আরেকটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন, নাকি এটা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। কোম্পানির নেতৃত্ব, পরিচালনা পর্ষদ, জ্যেষ্ঠ নেতৃত্ব দল এবং কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগ যেমন মানবাধিকার বিভাগ, নীতি দেখাশোনার দল অথবা আইনি বিষয় দেখাশোনার দল-সম্পর্কে জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা অত্যাবশ্যক, কারণ আপনি যখন কোম্পানির সঙ্গে কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন সেই পরিকল্পনা উন্নয়ন করবেন তখন এগুলো আপনাকে দিকনির্দেশনা দেবে।
  • কোম্পানি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলো দেখুন। এটা আপনাকে কোম্পানির উপাত্ত সুরক্ষা ও ববহারকারীর অধিকারের মতো বিষয়ে কোম্পানির অতীত অনুশীলন সম্পর্কে বোঝাপড়ায় সহযোগিতা করবে।
  • কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলুন। কোম্পানির কর্মী, গ্রাহক এবং এমনকি অংশীদারদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
  • কোম্পানিটি যদি প্রকাশ্যে লেনদেন বা বাণিজ্য করে তাহলে আপনি অংশীদারদের সভায় অংশ নিতে পারেন। আপনি কোম্পানির ওয়েবসাইটে ‘বিনিয়োগকারীদের সম্পর্ক বিষয়ক তথ্য খোঁজ করার মধ্য দিয়ে এটা শুরু করতে পারেন। সেখানে অংশীজনদের সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য দেওয়া আছে, সেটা দিয়েই আপনি তাদের সম্পর্কে পরিচিত হতে পারেন। এই সব উপকরণ থেকে অনেক সময় সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কেন কোম্পানির পণ্য ও পরিষেবায় প্রভাব পড়ে তার অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। একটি কোম্পানি কীভাবে তাদের ব্যবসা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বাইরের হুমকিগুলো উপলব্ধি করে সেটি বুঝতে এই সব উপকরণ আপনার সামনে একটা জানালা খুলে দেয়।
  • কোম্পানির প্রতিনিধিদের মধ্যে যারা আপনার যোগাযোগের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাদের খুঁজে বের করার পর, তারা যে সব কাজে অংশগ্রহণ করছেন, সেদিকে নজর দিন। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার এবং আপনার উদ্বেগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার ক্ষেত্রে এটা আপনার জন্য দুর্দান্ত একটা সুযোগ।

একবার আপনি কোম্পানির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে পারলে, পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করার জন্য আপনি ভালো অবস্থানে থাকবেন। কোম্পানির বর্তমান নীতিগুলো সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবেন।

ঘ. সম্পৃক্ততার ধরন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন

কোম্পানির সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পৃক্ত হবেন– তা কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো: বৈঠকে যারা অংশ নেবেন তাদের অবস্থান, অংশীজনদের সঙ্গে সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগ এবং অর্থের সংস্থান। কোম্পানির সঙ্গে আপনি ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। কোম্পানি ও অংশীজনদের নিয়ে সরাসরি বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। অথবা ওয়েবিনার আয়োজন করতে পারেন যেখানে আপনি আপনার প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। এ জন্য আপনি আপনার প্রতিবেদনের আওতাধীন কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততার একটি উপায় হচ্ছে অংশীজনদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা। এর মধ্য দিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, শিল্পের পরিচালক ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য অংশীজনদের একত্রিত করা। কর্মপদ্ধতি, ফলাফল ও সুপারিশগুলো দিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পারেন। এরপর আপনি একটা মুক্ত আলোচনা আয়োজন করতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন সভাকক্ষে উপস্থিত অংশীজনেরা প্রতিবেদনে উপস্থাপিত সুপারিশগুলো কতটা আত্মস্থ করতে পারছে।

ঙ. কোম্পানির কাছে পৌঁছানো

স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও কৌশল উন্নয়ন ও সম্পৃক্ততার ধরন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনার জন্য কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের সময় আসবে। এটা দুইভাবে করা যেতে পারে। ১. আপনার হাতের কাছে যোগাযোগের যে পথগুলো আছে তা দিয়েই সরাসরি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যোগাযোগের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল। দুই. কোম্পানিটি যদি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভস (জিএনআই) সদস্য হয় তাহলে জিএনআই টিমের কাছ থেকে সেই কোম্পানির মূল্যায়ন আপনি পাবেন। কোম্পানিটি জিএনআইয়ের সদস্য কিনা সেটা এই লিংকে গিয়ে যাচাই করতে পারেন: https://globalnetworkinitiative.org/#home-menu

কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের সময় এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার বার্তাটি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত তথ্যসহ সংক্ষিপ্ত হয়েছে। এমন যদি হয় আপনি প্রথম যোগাযোগ করছেন তাহলে নিজের পরিচয়টা তুলে ধরুন। কেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন– তা ব্যাখ্যা করুন, যে গবেষণা পদ্ধতিটা আপনি গ্রহণ করেছেন তার পরিচিতি তুলে ধরুন এবং তাদেরকে জানান গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনি একটা বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানাচ্ছেন।

যদি এমন হয় আপনি আগেই ইমেইল করেছেন এবং আপনার প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আবারও যোগাযোগ করেছেন তাহলে তাদের অবশ্যই এটা নিশ্চিত করুন যে, ই-মেইলে আপনি আপনার প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছেন। সেখানে আপনাকে অবশ্যই জানাতে হবে বৈঠকটি কোথায়, কবে অনুষ্ঠিত হবে এবং বৈঠকে কোন কোন অংশগ্রহণকারী ও সংস্থা উপস্থিত থাকবে।

বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির প্রতিনিধি যারা বৈঠকে অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে আগেই যদি আপনার যোগাযোগ হয়ে থাকে অথবা যে সব প্রতিনিধিদের সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করছেন, বৈঠকের আগেই তাদের সবার কাছে আপনার প্রতিবেদনটি পৌঁছে দিন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অন্তত সাত দিন আগে সেটা পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রতিবেদনটি বৈঠকের সময় তারা কী প্রত্যাশা করবেন সে সম্পর্কে তাদের একটা ধারণা দেবে এবং বৈঠকের আগেই তারা একটা আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এটা বৈঠককে ফলদায়ক করে তুলবে।
বিশেষ পরামর্শ- বৈঠকের আগে অপ্রকাশিত প্রতিবেদনের অনুলিপি কোম্পানির সঙ্গে শেয়ার করার সুবিধা হচ্ছে আপনার সম্পর্কে তাদের একটা ভালো ধারণা তৈরি হবে। এটি তাদের কাছে এই ধারণাটি স্পষ্ট করে তুলে ধরবে যে, অপ্রকাশিত অনুলিপিটি পরিবর্তন করা হবে না। এটা আপনার ফলাফল ও সুপারিশগুলো প্রকাশ্যে আনার আগে সেটার ওপর তাদের মতামত জানানোর সুযোগ করে দেয়।

বৈঠককে সামনে রেখে কোম্পানির কাছে পাঠানো নমুনা ইমেইল

(পরিচিতিমূলক ইমেইল)

প্রিয় নায়লা,

আমার নাম আয়রানা জুরি, বর্তমানে ইন্টারনিউজে গবেষক হিসাবে কাজ করছি। আমরা আপনাদের কোম্পানির জন-প্রতিশ্রুতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এগিয়ে নেওয়ার নীতি এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা বিষয়ে গবেষণা করেছি।

আমরা আপনার কাছে আজ এই চিঠি লিখছি তার কারণ হলো আমাদের গবেষণা এখন শেষ হয়েছে। এবং প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশের আগে আমরা এর গবেষণা প্রক্রিয়া, ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী।

অনুগ্রহ করে যদি আমাদের জানান এই মাসের যে কোনো দিন আপনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী এবং আমরা এ বিষয়ে আলোচনা আরও এগিয়ে নিতে পারি।

আমরা আপনার উত্তরের প্রত্যাশায় রইলাম।

আপনার বিশ্বস্ত 

আয়রানা জুরি

তাদের সাড়া পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইমেইলের নমুনা

প্রিয় নায়লা,

সভায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। পরের সপ্তাহে আপনার সঙ্গে আমাদের সভাকে সামনে রেখে কয়েকটি হালনাগাদ তথ্য আপনার সঙ্গে শেয়ার করছি।

সভায় জিএনআই, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস, ইন্টারনিউজ, এবং ইন্টারনিউজ-এর গ্রেটার ইন্টারনিউজ ফ্রিডম প্রকল্পের অংশীজনসহ আমাদের ১০ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

আলোচ্যসূচিতে, আমরা গবেষণাপদ্ধতি, মূল ফলাফলগুলো এবং মূল সুপারিশগুলো উপস্থাপন করব; আমাদের ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে ৩০ মিনিটের একটা উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব থাকবে। কীভাবে সামনে অগ্রসর হওয়া যাবে ও পরবর্তী ধাপ বিষয়ক সংলাপের মধ্য দিয়ে আমরা এ পর্বটি শেষ করব। অনুগ্রহ করে এখানে দেওয়া সম্ভাব্য আলোচ্যসূচিটা দেখবেন।

অনুষ্ঠানটি হবে লেকভিল শহরের ব্লিমিং রোজ হোটেলে।

কোনো বিষয়ে আরও স্পষ্ট কোনো তথ্য জানার থাকলে অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করবেন। বৃহস্পতিবার আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার জন্য ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

শুভেচ্ছান্তে

আয়রানা জুরি

বিশেষ পরামর্শ: সভায় কাদের থাকা উচিৎ? সভায় কতজন অংশগ্রহণকারী থাকবেন এবং তারা কোন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন– তা জানা কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কোম্পানির সঙ্গে প্রথম সভা নিয়ে বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির সঙ্গে প্রথম সভার সময় শুরুতেই সবার পরিচিতি তুলে ধরুন, যাতে করে সভাকক্ষে উপস্থিত সবাই জানতে পারেন সেখানে কারা রয়েছেন, কোন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব তারা করছেন, সংস্থায় তারা কি ভূমিকা পালন করছেন। দ্বিতীয়ত, র‍্যাঙ্কিং ডিজিটাল রাইটস গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে একটা ধারণা দিন, যাতে করে কোম্পানির প্রতিনিধি যারা সেখানে উপস্থিত আছেন তারা যেন গবেষণায় যে সব সূচক ব্যবহার করা হয়েছে এবং গবেষণাটি কীভাবে করা হয়েছে তার একটা ছবি দেখতে পান। গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনের পর গবেষণায় পাওয়া ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করার সুযোগ দিন, তাদের যদি কোনো ফিডব্যাক দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা দিন। সবশেষে সামনে এগোনোর উপায় নিয়ে আলোচনা করুন। আপনারা কি তাদের সঙ্গে ফলোআপ সভা করবেন? অন্য কোম্পানির সঙ্গে কি সভা করবেন? এটা কোম্পানিকে পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিতে সহযোগিতা করবে এবং আপনার দিক থেকে পরবর্তী যোগাযোগের পথ খোলা রাখবে।
মূল সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি নিয়ে বিশেষ পরামর্শ: এর পরের ধাপ হচ্ছে কোম্পানির মূল সিদ্ধান্ত গ্রহীতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি। এটা কারও অ্যাডভোকেসি বা পরামর্শবিষয়ক লক্ষ্যগুলোকে সামনে অগ্রসর করতে সহায়তা করে। এটা সম্ভব হয় কোম্পানির জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের ও আইন বিভাগকে শনাক্ত করা এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে আপনাকে ও আপনার সংস্থাকে পরিচিত করার মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল অধিকার নিয়ে কোম্পানির নীতি ও অনুশীলন নিয়ে আলোচনার জন্য একটা বৈঠকের তারিখ ঠিক করার চেষ্টা করুন, ফোন করুন অথবা তাদের ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করুন।

 চ. আপনার যুক্তির সমর্থনে প্রমাণ ব্যবহার করুন

সভায় আপনি আপনার যুক্তিগুলোর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করুন এবং সেখানে উত্থাপিত বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কোম্পানিকে রাজি করান। কোম্পানির নীতি ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে অনুশীলনের প্রভাব কী তা দেখানোর জন্য উপাত্ত, কেস স্টাডি ও গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরুন। দৃষ্টান্ত হিসাবে আপনি উপাত্ত চুরি বা ফাঁসের কারণে ব্যবহারকারীরা কতটা আক্রান্ত হয়েছে তার পরিসংখ্যান অথবা যে সব ব্যক্তির ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে সেই কেস স্টাডিগুলো তুলে ধরুন। উপাত্ত সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোম্পানির যে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন– তা দেখাতে আপনি এটা করুন।

যে সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বৈঠকের পর সে সব বিষয়ে ফলোআপ করুন। সবশেষে, নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও ফলোআপ করতে হবে। আপনার উত্থাপিত বিষয়গুলোতে এবং ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব রক্ষায় কোম্পানি যে সচেতন রয়েছে সেটা নিশ্চিত করার জন্য এটা করা প্রয়োজন। বেসরকারি খাতের কোম্পানি যদি কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয় তাহলে তারা সেটা করছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত খোঁজ করুন। যদি তারা সম্মত না হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে এ নিয়ে একটা ব্যাখ্যা চান এবং তারা কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে তা নিয়ে পরামর্শ দিন।

বিশেষ পরামর্শ: কোম্পানির সঙ্গে প্রথম বৈঠকের সময় আপনার প্রেজেন্টেশনে কোন বিষয়ে বেশি নজর কাড়বেন? প্রতিবেদনের ফলাফল ও সুপারিশগুলো নিয়ে আপনি যখন প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করবেন তখন এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি প্রতিটি সূচক নিয়ে আলোচনা করেছেন, অনুসন্ধানে পাওয়া মূল বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং আপনার দেশের অথবা অন্য দেশের ঘটনাগুলোকে তুলে ধরেছেন। প্রতিবেদনে যে ফলাফলগুলো আপনি পেয়েছেন তার গুরুত্ব ও প্রভাব দেখানোর জন্য এটা করা দরকার। দৃষ্টান্ত হিসাবে এমন একটা দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসুন যেখানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছে। আপনি যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের প্রাপ্তি এই সূচকটি দেখাবেন তখন এ বিষয়টিতে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করুন যে কোন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন সামাজিক মাধ্যম ও তাৎক্ষণিক বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ ও সেবায় প্রবেশে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে। আপনি আপনার প্রেজেন্টেশনে বিশেষভাবে দৃষ্ট আকর্ষণ করুন যে অতীতেও দেশটিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণে দেশটির জনগণের ওপর কি প্রভাব পড়েছিল। এর মাধ্যমে আপনি কোম্পানিকে প্রাসঙ্গিক নীতি প্রকাশের জন্য সুপারিশ করুন।

ছ. বৈঠকের পর ফলোআপ কীভাবে করবেন

উপস্থিত ছিলেন এমন প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর কাছে বৈঠক শেষ হওয়ার পর একটি ইমেইল পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বৈঠকে বেরিয়ে আসা মূল প্রতিশ্রুতিগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া। যেমন, কোম্পানি যদি লিখিত আকারে তাদের মন্তব্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে তাহলে সেটা উল্লেখ করতে ভুলবেন না। সময়সীমার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করুন যেন তারা এ ব্যাপারে সচেতন হয় যে.তাদের মন্তব্যগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে।

ফলোআপ মেইলের নমুনা

হাই নায়লা,

গতকালের বৈঠকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে বড় একটা ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ এবং প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করে ও ফিডব্যাক জানিয়ে আপনি যেভাবে আমাদের সম্মানিত করেছেন তার প্রশংসা জানাই।

বৈঠকে আপনি সম্মত হয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ একটা সামগ্রিক ফিডব্যাক পাঠাবেন। অনুগ্রহ করে সেটা পাঠাবেন। কোনো বিষয়ে স্পষ্ট করে আরও কিছু জানার দরকার হলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।

একটা ভালো সপ্তাহ কাটুক।

শুভেচ্ছান্তে

আয়রানা জুরি

বিশেষ পরামর্শ: বৈঠকের পর ফিডব্যাক পাঠানোর জন্য তাদেরকে সময় দিন। প্রতিবেদনের ওপর কোম্পানির ফিডব্যাক পাঠানোর আগে দলের সদস্য অথবা প্রতিষ্ঠানের অন্য বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় দরকার হয়। সেটা করার জন্য প্রথম বৈঠকের পর আপনি তাদের জন্য কিছুটা সময় দিন যাতে করে তারা আপনার প্রতিবেদনের ওপর তাদের লিখিত ফিডব্যাক পাঠাতে পারে।

জ. সচেতনতা তৈরির জন্য সামাজিক মাধ্যমের সুবিধা নিন

সামাজিক মাধ্যম আপনার প্রচারণার সচেতনতা সৃষ্টিতে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী টুল হতে পারে। আপনার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং সমর্থকদের তাতে সম্পৃক্ত করতে হ্যাশট্যাগ, পিটিশন ও অন্যান্য অনলাইন টুল ব্যবহার করুন। আপনার গবেষণার ফলাফল আরও দৃশ্যমান করার জন্য আপনার গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

ঝ. অগ্রগতি অনুসরণ ও প্রভাব মূল্যায়ন

কতটা অগ্রগতি হচ্ছে সেটা অনুসরণ করা এবং কতটা প্রভাব তৈরি করছে তার মূল্যায়ন করা বেসরকারি খাতে আপনি কতটা কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হতে পারছেন– তা পরিমাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্ট মাপকাঠি নির্ধারণ করুন এবং ডিজিটাল অধিকারের বিষয়ে কোম্পানির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করুন। সমর্থক ও অংশীজনদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন এবং আপনার কৌশল উন্নয়নের ক্ষেত্রে সে ফিডব্যাক ব্যবহার করুন।

ঞ . সাফল্য উদযাপন

পরিশেষে, যত ছোট অগ্রগতি হোক না কেন সেটাকে স্বীকৃতি দিন। ডিজিটাল অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং প্রচেষ্টার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিন।

বিশেষ পরামর্শ: অন্যদের দক্ষতাকে কাজে লাগান। আপনার সঙ্গীদের সক্ষমতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে জিএনআই-এর কথা বলা যায়। জিএনআই হচ্ছে সদস্যভিত্তিক সংস্থা, টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এই সংস্থার কিছু সদস্য। ফলে একটি দল সবচেয়ে ভালো উপায়ে কীভাবে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে জিএনআই তার একটা ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। একই সঙ্গে কীভাবে বার্তা আদান-প্রদান করতে হবে, কীভাবে কোম্পানির কাছে পৌঁছাতে হবে এবং কীভাবে সফলভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে তার জন্যও প্রয়োজনীয় পথ দেখাতে পারে জিএনআই।

গ্লোবাল ইন্টারনেট ফোরামের মূল ইংরেজি টুলকিটটি পাবেন এখানে

Policy Brief: AI Policy and Governance in Bangladesh

Policy Brief: AI Policy and Governance in Bangladesh

Artificial Intelligence (AI) technologies hold immense potential to transform societies, economies, and governance systems. However, the rapid advancement and deployment of AI also raises complex ethical, legal, and social challenges particularly in safeguarding human rights.

Bangladesh, recognizing the importance of AI, has drafted a National AI Policy aimed at harnessing its potential while addressing associated challenges. Keeping its potential in mind, the Policy aims to implement it in various sectors to boost the economy and to ensure national security, while making sure there are some pre-emptive measures for some of the inherent risks of AI. This policy brief critically examines the draft policy and digs into the key concerns, highlights ambiguities, and outlines strategies for advocating for inclusive and transparent AI governance.

Policy Brief Series: Promoting Digital Rights in Bangladesh

Policy Brief Series: Promoting Digital Rights in Bangladesh

Promoting Digital Rights in Bangladesh is the first part of a four-part policy brief series initiated by Digitally Right. The primary objective of this initiative is to identify key digital rights priorities in the country, support civil society, industry and the government with relevant knowledge and insights, and promote collaborative, multi-stakeholder discussions.

As the initial installment of the series, this brief provides a broad overview of digital rights priorities, the contemporary policy landscape, needs, gaps, and potential areas for engagement through consultation with stakeholders, including local civil society and international organizations, along with comprehensive desk research. Subsequent briefs in the series will cover specific priority issues, examining content governance, internet access and shutdowns, and privacy and data protection.

Safeguarding Journalists: Insights from Digitally Right’s Digital Hygiene Trainings

Safeguarding Journalists: Insights from Digitally Right’s Digital Hygiene Trainings

As part of the Digital Safety School initiative, Digitally Right hosted two dynamic Digital Hygiene Trainings on June 22-23 and July 13-14, 2024. Co-sponsored by the SWISS Embassy of Dhaka, these sessions empowered participants with essential tools and strategies to enhance their online safety and digital well-being.

The target audience for both trainings was journalists from regional correspondents for news organizations or local news outlets outside of Dhaka. 12 participants from various news and media organizations attended the first training. Of the participants, 3 were female and 9 were male. 10 participants from various news and media organizations attended the second training. There were 3 female and 7 male participants. These training sessions were very pertinent and helpful for the group because they frequently deal with the greatest digital threats, issues, and security risks due to their line of work.

Both trainings followed a similar agenda and discussion topics. The first day began with an ice-breaking session where participants introduced themselves and shared the digital risks or threats they had encountered in their work. They were also asked about which digital safety methods or tools they employ to get a better understanding of their skill level.

After assessing each participant’s risk level and digital security knowledge, the training sessions began with an overview of common digital safety practices. This was followed by a session on online safety, which covered secure browsing techniques and ways to protect social media and internet service accounts. Participants also learned how to safeguard offline information and were introduced to data encryption tools for managing specific risks. In the afternoon, they explored tools for securely storing, transferring, and permanently deleting data, and the final session focused on best practices for capturing photos and videos—crucial skills for field reporters.

On the final day of the first training, two representatives from the SWISS Embassy attended, and participants shared feedback on what they had learned and how they planned to apply it in their work. The second training’s final day began with a recap of the previous day’s topics. Sessions then covered best practices for device and communication security, followed by lessons on identifying and protecting against phishing and malware. A fact-checking expert led the last session, teaching participants how to verify fake images and videos using advanced search and fact-checking tools. The training ended with a summary of key topics and a Q&A session.

Impact of the Training

Journalists face significant digital challenges and security risks, worsened by restrictive laws in the country. Since the inception of Digitally Right’s Digital Safety School it has made an impact in supporting journalists. The initiative aims to hold monthly training sessions for at-risk journalists across Bangladesh, depending on available funding. Candidates apply for each training session, and participants are selected based on these applications. Each training is tailored to the specific needs of the group—for instance, journalists outside Dhaka face greater risks and have fewer resources, so their sessions differ from those for journalists in the capital. In the current context, such training has become essential for journalists nationwide.

When asked about the training, one participant expressed their gratitude and shared, “Journalists who are working outside the Capital inherently are at more risk. Therefore, this training will be highly beneficial. I am very pleased with the training.” 

One participant added, “Another colleague of mine had previously attended a digital safety training with Digitally Right and learned the use of the Tella app. While investigating a voting scam he had used the Tella app to take pictures at the polling station and when law enforcement coerced him to show the pictures in his gallery, they could not find anything. This not only saved him from facing severe consequences but he was also able to use the pictures taken using Tella on his story. I have learned a lot from this training myself and hope these learnings help me out in the future the same way it helped my colleague.”

Digitally Right Represents Bangladesh in the GIF SSEA Year 4 Regional Training

Digitally Right Represents Bangladesh in the GIF SSEA Year 4 Regional Training

The Digital Rights Advocacy training was a four day event organized by EngageMedia. The training was attended by participants from 7 different countries in the Asia Pacific region, namely – Bangladesh, Cambodia, Indonesia, Maldives, Nepal, Philippines and Sri Lanka.  During each of these sessions the organizers dealt with various aspects related to advocating for rights and at the same time encouraged the participants to share their own experiences in their respective countries. 

The first day of the training consisted of introductions among the participants, organizers and the trainers followed by a rundown of the entire training design. Afterwards, the participants were asked to share the safety concerns related to advocating for digital rights in their respective countries. The session concluded with a discussion on the Three-Part Test, a three fold test that is used to determine the validity of a law. On the second day of the training the participants got to learn how to strategize our digital rights advocacy efforts and how to achieve engagement with government agencies. The third day of the training focused on engaging with the private sector including identifying how the private sector can contribute towards the fulfillment of digital rights and aligning the policy priorities of the private sector with digital rights advocacy. The fourth day of the training was a culmination of the learnings from the previous two days and working together for the feedback submission of the Internet We Want. 

All four days of the training consisted of numerous interactive sessions and group works. During these group works the participants were divided into 2 groups and they had to come up with advocacy strategies for the various scenarios provided by the organizers. During these exercises the participants discussed the strategies that have worked in their own countries. The most eye opening part of the whole training was how similar the problems faced by all the countries were. For instance, all 7 participants could relate to their countries having laws that justified overbearing surveillance using national security. These group activities helped the participants identify common problems and exchange ideas and strategies that they have applied in their own countries. All in all it was a great network building initiative along with being a training program.